ডিসি সম্মেলন শুরু আজ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৪ এএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৩ এএম
ফাইল ফটো
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ রবিবার। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। গত বছর তা ছিল ২৪৫টি।
শনিবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সবচেয়ে বেশি ২২টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। এ ছাড়া জনসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, আইনকানুন, বিধিমালা সংশোধন এবং জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।
গত বছর এই প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। গত বছরের চেয়ে এবার একশর বেশি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা।
প্রতি বছর বেশির ভাগ প্রস্তাব থাকে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত। এবারও প্রস্তাব বাড়ার সঙ্গে ক্ষমতার পরিধি, জেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রস্তাব বেশি এসেছে।
আজ প্রথম কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এরপর করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দাবিদাওয়া এবং ৬৪ জেলার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনা তুলে ধরবেন ডিসিরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বেলা ৩টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ফিরবেন।
এবার প্রথম কার্য-অধিবেশনের আলোচনায় স্থান পেয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিকালে থাকছে ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক আলোচনা।
এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা মাঠ প্রশাসন সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
শনিবার সচিবালয়ে এই সম্মেলন নিয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এবারের সম্মেলন ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই চার দিনে স্পিকার, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জেলা প্রশাসকরা সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়বিষয়ক অধিবেশন সংযুক্ত করা হয়েছে।
অধিবেশন হবে মোট ৩০টি। এর মধ্যে একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, একটি স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় এবং একটি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্য আনুষ্ঠানিকতা দুটি। মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মন্ত্রী/উপদেষ্টা/প্রতিমন্ত্রী/সিনিয়র সচিব/সচিবরা সম্মেলনে অংশ নেবেন।
এবার মোট ৩৫৬টি আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশিসংখ্যক প্রস্তাব ২২টি এসেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে।
প্রধান আলোচ্য বিষয়ে থাকছেÑ ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর সরকারপ্রধানের সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। প্রথম কার্য অধিবেশন হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে।
এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন রয়েছে সাতটি, দ্বিতীয় দিন ৯টি, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন সাতটি করে ১৪টি অধিবেশন।
প্রথম দিন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনটি অধিবেশন হবে। একইভাবে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা। এসময় প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের সময় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় রাষ্ট্রপতি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ায় এবার তা হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা এবার সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় করবেন। এরপর নৈশভোজে অংশ নেবেন। শেষ দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ সময় বিচার বিভাগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন প্রধান বিচারপতি। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা হবে। সবশেষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ডিসি সম্মেলন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমি যাব। ডিসি সম্মেলনের আলোচনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করব। এতে সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে করে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপকৃত হবেন।