প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৭ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৯ পিএম
রাজধানীতে র্যাব-৩-এর পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাং সদস্যদের একাংশ। প্রবা ফটো
প্রভাবশালীদের মদদে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। তাদের ছত্রছায়ায় গ্যাং কালচারের উঠতি বয়সি তরুণদের রাজত্ব বাড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতাদের ধরতে কাজ করছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।
এর আগে সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত র্যাব-৩-এর পৃথক আভিযানিক দল কিশোর গ্যাং রাব্বি গ্রুপের পাঁচজন, হৃদয় গ্রুপের সাতজন, মুন্না গ্রুপের তিনজন, হাসান গ্রুপের দুজন, রকি গ্রুপের ১০ জনসহ সর্বমোট ২৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাব্বি, হৃদয়, মুন্না, হাসান, আব্দুর রশিদ এসহাক ওরফে রকি, শুভ, সিফাত, রাকিব, তন্ময় হোসেন, মিলন, রাজন, ইয়াছিন, ইমন, আবু তাওহীদ সাফির, মো. সিয়াম, রাকিবুল ইসলাম, জাকির হোসেন, রাকিব, নাফিস হোসেন মুন্না, শুভ, রবিউল শেখ, মোশারফ, সোহেল, মো. শুভ, বাবুল খান, নজরুল হক ও বাবুল হোসেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পেশায় গাড়ির হেলপার, ড্রাইভার, গ্যারেজ মিস্ত্রি, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণশ্রমিক, পুরোনো মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোনো ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মাধ্যমে মাদক কারবারির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সকল সন্ত্রাসীর হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হচ্ছে।’
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতিটি কিশোর গ্যাং গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য থাকে। রাব্বি গ্রুপটি সন্ত্রাসী মো. রাব্বির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দলের কারণে তারা দুই থেকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়। হৃদয় গ্রুপটি গ্রেপ্তারকৃত হৃদয়ের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর বংশাল ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘শাহজাহানপুর ও সবুজবাগ এলাকায় মুন্না ও হাসান গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী মো. মুন্না ও হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর শাহাজাহানপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মারামারিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে গ্রুপটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রকি গ্রুপটি রাজধানীর শ্যামপুর কদমতলী, যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় রকির নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারা এসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে থাকে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা। এ ছাড়াও তারা রকির নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করত।’
র্যাব জানায়, শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর, বংশাল ও এর আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব। এর ফলে র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয় এবং রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল থানাধীন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য পাওয়া যায়। তারই ধারাবাহিকতায় পৃথক অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ২৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।