পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
আলাউদ্দিন আরিফ
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০১ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বার্ষিক প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। প্রতিবছরই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে পুলিশ। এবারও পুলিশের রয়েছে একগুচ্ছ দাবিদাওয়া। এসব দাবির মধ্যে অন্যতম পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে পদোন্নতি ও পদায়ন জটিলতা নিরসন, ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটির জন্য ওভারটাইম ভাতা ও পরিদর্শক থেকে তদোর্ধ্বদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদান ইত্যাদি। পুলিশ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আন্তরিকতার সঙ্গে দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু অধিকাংশই আশ্বাসে আটকে থাকে।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের দাবিদাওয়ার মধ্যে আরও রয়েছে রেঞ্জ কার্যালয়ে এলআইসি ইউনিট, মোবাইল ট্র্যাকার ও ক্রাইম সিন ভ্যান দেওয়া, বাদী ও সাক্ষীদের ভাতা দেওয়া, বিদেশি মিশনে লেবার অ্যাটাচে পদায়ন, বিভাগীয় সদর দপ্তরে মাদকসহ আলামত পরীক্ষাগার নির্মাণ, আইজিপি পদকে চিফ অব পুলিশ করা, থানায় বিট পুলিশিং পরিদর্শক পদ সৃষ্টি করা, প্রতিটি বিভাগে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন, শ্রম আইন প্রয়োগ ও শ্রমিক মালিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে শিল্প পুলিশকে এ-সংক্রান্ত বিচারিক কাজে অন্তর্ভুক্ত, ট্রাফিক ভাতা বৃদ্ধি, রেশনের চাল ও পোশাকের মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
এছাড়া রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা, গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ ও পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকিভাতা, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোসহ পুরোনো দাবিগুলো ফের তুলে ধরা হবে।
পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, এবার পুলিশ সপ্তাহে যারা সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পেয়েছেন, তাদের প্রেষণে নিয়োগের দাবি তোলা হবে। আগের মতো বিআরটিএ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পুলিশ অফিসারদের প্রেষণে নিয়োগ, গ্রেড-১ পদসংখ্যা ৪টি থেকে ১০টিতে উন্নীতকরণের দাবি তোলা হবে।
এবারের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সব থেকে বড় দাবি পদোন্নতি জট নিরসন করা। এজন্য সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়ে সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দিচ্ছে, কিন্তু এটা নিয়মিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বয়স ও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়ার দাবি থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ে অন্যান্য ক্যাডার অফিসারদের মতো পুলিশ অফিসাররা যেন পদোন্নতি পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সেখানে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যা সমাধানে মিশনগুলোয় পুলিশ অফিসারদের প্রেষণে লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগের দাবি করছি আমরা।
দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু আছে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পূরণ হচ্ছে না। কিন্তু ঝুঁকিভাতার বিষয়টিও অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তবুও অন্যান্য সব ক্যাডারে পদোন্নতি দেওয়া হলেও পুলিশে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে জুনিয়র থেকে সিনিয়র পর্যায়ে হতাশা বিরাজ করছে।
কর্মসূচি: পুলিশ সদর দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবারের পুলিশ সপ্তাহের স্লোগান দেওয়া হয়েছে ‘স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে কল্যাণ প্যারেডে ভাষণ দেবেন।
এবার বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. সোহেল রানা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন।
দেওয়া হবে ৪০০ পদক: প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় চমক থাকে বছরজুড়ে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদক প্রদান। এবার ৪০০ পুলিশ সদস্যকে পদক প্রদান করা হবে। অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামলূক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা এবং ২১০ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা পদক প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেবেন।
অন্যান্য কর্মসূচি: পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাণী দিয়েছেন। এছাড়া পুলিশ সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারগণের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারগণের উদ্দেশে ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারগণের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিবর্গ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং আইজিপির সম্মেলন, আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি।
এছাড়া পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্ম-অধিবেশনে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে। পুলিশ সপ্তাহ শেষ হবে আগামী ৩ মার্চ।