× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিডিআর বিদ্রোহের ১৫ বছর

বিস্ফোরক মামলায় ১৪ বছরেও সাক্ষ্য বাকি ৯০০ জনের

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৫২ এএম

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২৫ এএম

রাজধানী বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানায় বিডিআর জওয়ানদের বর্বরোচিত গুলি ও হামলায় প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তাদের কবর। প্রবা ফটো

রাজধানী বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানায় বিডিআর জওয়ানদের বর্বরোচিত গুলি ও হামলায় প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তাদের কবর। প্রবা ফটো

বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ২০১০ সালের ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চার্জশিট দেওয়ার প্রায় ১৪ বছর শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার কার্যক্রম আজও শেষ হয়নি। এখনও মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ১ হাজার ১৬৪ সাক্ষীর মধ্যে ১৪ বছরে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ২৭৩ জন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, মামলাটির বিচার চলতি বছরই শেষ হবে। আসামিপক্ষ বলছে, হত্যা মামলায় অনেক আসামি খালাস ও বিদ্রোহের মামলায় স্বল্পমেয়াদি সাজা খাটা ৪৬৮ জন আসামির সাজার মেয়াদ শেষ বহু আগেই। তারপরও বিস্ফোরক মামলার রায় না হওয়ার কারণে তারা জেলে আছেন। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তারা মুক্তি পাবেন।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর জওয়ানদের বর্বরোচিত গুলি ও হামলায় প্রাণ হারান ৭৪ জন। এদের মধ্যে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৫৭ জনই ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলার চার্জশিট হয় ২০১০ সালের ১০ জুলাই। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। এখন হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল শুনানি চলছে। 

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে রাজধানীর বকশীবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি। ১১৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত মামলাটিতে প্রায় ২৭৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই ঘটনায় হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন আপিল বিভাগে আসামিদের আপিল শুনানি চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ মাঝে দুই বছর করোনার কারণে বিলম্বিত হয়। এখন আবার আদালতের কার্যক্রম চলছে। সাক্ষীও আসছে। ২৭৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৩০০-৩৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত রায় ঘোষণা করতে পারবেন বলে আশা করছি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘১৪ বছর হয়ে গেল, বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষই হত্যা মামলায় রায় পাওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছে না। হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ জন বিস্ফোরক মামলারও আসামি। হত্যা মামলায় খালাস পেয়েও বিস্ফোরক আইনের মামলার কারণে তারা মুক্তি পাননি। জামিন পাচ্ছেন না। তাই উচিত হবে যারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন, তাদের জামিন দেওয়া, না হয় বিস্ফোরক আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, বিস্ফোরক মামলায় তারা খালাস পাবেন। কিন্তু কবে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে তা অনিশ্চিত।’

বিস্ফোরক মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৪৪ আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। অপর ১৯ আসামি এখনও পলাতক। বাকি ৭৭১ আসামি কারাগারে।

বিডিআর বিদ্রোহের হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি বিডিআর সদস্য মুসার ভাই মো. ওয়ারেছ বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা শেষ হয় ২০১১ সালে। এরপর হত্যা মামলাটিতে ২ বছর ১১ মাসের মধ্যে সকল আইনি কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন আদালত। এ মামলা উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর। অথচ একই সঙ্গে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার গেজেট হওয়ার পরও বিস্ফোরক মামলাটি কোনো এক অদৃশ্য কারণে আলাদা করা হয়, যা এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।’ 

বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক মামলার একজন আসামির ভাই বলেন, ‘আদালত থেকে হত্যা মামলায় নির্দোষ প্রমাণ হয়ে খালাস পান ২৭৮ জন। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি সাজাভোগ শেষ করা ১৯০ জন বিডিআর সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৪৬৮ জন বিডিআর সদস্য মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু বিস্ফোরক মামলার কারণে খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি মামলা নিষ্পত্তি করা ও জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’

বিডিআর সদস্য মুসার ভাই ওয়ারেছ বলেন, ‘আমরা অসহায় পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ ভুক্তভোগী পরিবার যেমন ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে, তেমনি আমরা আসামির পরিবারগুলোও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। একজন বন্দির সকল আইনি সুযোগ-সুবিধাসহ ন্যায়বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা সকল আইনি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু সদস্য বিদ্রোহ শুরু করে। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন হয় বাহিনীর আইন।

এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় ৪ বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। 

কর্মসূচি : পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ শাহাদতবার্ষিকী পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কুরআন, বিজিবির সব মসজিদ ও বিওপি পর্যায়ে শহীদদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ রবিবার সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিনিধি, তিন বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। 

এছাড়া কাল সোমবার বাদ আসর পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদদের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল শনিবার বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা