‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’র গোলটেবিল আলোচনা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪০ পিএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫১ পিএম
সিরডাপ মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা।
‘যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত সমৃদ্ধ, সেই দেশের ভাষা তত শক্তিশালী। বিশ্বে নিজের ভাষাকে শক্তিশালী করতে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে হবে। নিজ ভাষায় পণ্য এবং সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। নিজ ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে এর পরিধি ও চর্চা বাড়াতে হবে।’
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিরডাপ মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ভাষার মাসের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে প্রধান নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, বহু আগে থেকেই তিনি বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম ও পরিকল্পনা করেছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান শাসনামলে নয়, বাংলা ভাষা শত শত কাল থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আবার এটি হিন্দু না মুসলমানদের ভাষা তা নিয়েও ছিল বিতর্ক। মূলত বাংলা ভাষা ছিল সাধারণ মানুষের ভাষা; যা এখনো সাধারণ মানুষের মাঝে বেঁচে আছে। অভিজাত শ্রেণির লোকজন বিভিন্ন দাওয়াত কার্ড ইংরেজিতে দিয়ে থাকে নিজেদের আভিজাত্য দেখাতে। সাধারণ থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে।’
ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম, অন্যদিকে সংস্কৃতির বাহক। গুগলে দেখা যায়, পৃথিবীর বৃহত্তম পঞ্চমতম ভাষা বাংলা। আমার জানামতে এটি ভুল। জাতিগত দিক থেকে বাংলা হলো পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। যোগাযোগের বাহক হিসেবে এটি সপ্তম বা অষ্টম হতে পারে। আর এই বৃহত্তম ভাষার মানুষের প্রথম রাষ্ট্র গড়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
‘তবে এখনো আমাদের দেশে বিভিন্ন সাইনবোর্ডে ইংরেজি আধিক্য দেখা যায়। বাংলা অক্ষরগুলো খুব ছোট আকারে লেখা থাকে, যা খুব দুঃখজনক। কলকাতায় এই অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত সকল বই বাংলায় অনুবাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে যেন বাংলার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়,’ যোগ করেন ড. কামাল।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. রতন সিদ্দিকি বলেন, ‘ভাষার লড়াই খুব প্রাচীন। যুগে যুগে যারাই এসেছে, তারাই আমাদের ভাষা দখল করতে চেয়েছে। তারা এসেছে, কর্তৃত্ব করেছে, কিন্তু ভাষা বিলুপ্ত করতে পারেনি। লোক মেরেছে কিন্তু ভাষাকে মারতে পারেনি। এই ভাষার শক্তির কাছে কিছুই টিকে থাকেনি। দুয়েকটি শব্দ হয়তো তারা পাল্টে দিয়েছে।’
শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. বিশ্বজিত ঘোষ মনে করেন, ‘অর্থনীতি শক্তিশালী না হলে ভাষা কখনোই প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। নিজ ভাষায় পণ্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে না পারলে এটিকে সমৃদ্ধ করা যাবে না। আবার ভাষার জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন। সরকার চাইলে কোথাও অন্য ভাষার সাইনবোর্ড থাকবে না। পিএসসিতে একজন চাকরি প্রার্থীকে ২০ মিনিট ইংরেজিতে ইন্টারভিউ দিতে হয়। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলা ভাষায় দক্ষতার উপর কর্মজীবন নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষা আজ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। তারা আমাদের থেকেই শিখেছে ভাষার গুরুত্ব। অতীতের মতো এখনো আমাদের ভাষা অনেক শক্তিশালী। তবে বর্তমান পুঁজিবাদ বিশ্বে এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হতে হবে।’