প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪২ পিএম
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন থেকে তোলা। প্রবা ফটো
বড়লোক ও উচ্চ বর্ণের লোকদের কাছে বাংলা ভাষা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল চৌধুরী (ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী)।
তিনি বলেছেন, ‘বাংলা ভাষা বেঁচে আছে মেহনতি শ্রমিক মানুষের কাছে। বড়লোক ও উচ্চ বর্ণের লোকদের কাছে বাংলা ভাষা নেই। বড়লোকদের বিয়ের কার্ডে কেউ আর বাংলা লিখে না, লিখে ইংরেজিতে। তাই দেশের ভাষা যাদের হাতে প্রাণ পেয়েছে তাদের জন্য কাজ করতে হবে।’
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আমার ভাষা আমার শক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, প্রতি ১৫ দিন পর পর একটি ভাষার মৃত্যু হয়। একটি ভাষা শুধু একটি ভাষা নয়, সেই ভাষায় গড়ে উঠা সভ্যতা, তাদের দেখা স্বপ্ন, আশা আকাঙ্খা। তাই একটি ভাষার মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু। আমরা একটি সভ্যতার মৃত্যু হতে দিতে পারিনা।’
কামাল চৌধুরী আরও বলেন, ‘পাঁচটি ক্ষুদ্র ণৃ-গোষ্ঠী ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ানো হয়। তবে সব ক্ষেত্রে শিক্ষক পাওয়া যায় না। অনেক ভাষা আছে যাদের নিজস্ব লিপি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। আরও ভালোভাবে কীভাবে এসব বিষয়ে কাজ করা যায় সে প্রস্তাব আমার পক্ষ থেকে করব।’
বাংলা ভাষার মর্যাদার রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর এই শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তার ভাষা আর ভাষার মর্যাদা অন্য যোকোনো জিনিসের চেয়ে উপরে।’
ড. পবিত্র সরকার বলেন, ‘উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা আগে বাংলা লিখতে আপত্তি জানাতেন। তাদের মতে বাংলা ভাষায় লিখলে ১১ হাজার বছর নরকে থাকতে হবে। আবার উচ্চ বর্ণের ইসলাম ধর্মের লোকেরা বাংলা লিখতে আপত্তি জানাতেন। তারা মনে করতেন আরবি লেখা উত্তম। আব্দুল হাকিম এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এতো কিছুর পরও মধ্য যুগে আমরা একটা সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা পেয়েছি।’
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা, বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান। সমস্ত পৃথিবীর মাতৃভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার ইতিহাস জড়িত হয়ে গেছে। এই অহংকারটা সমগ্র বাঙালিকে উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য যে আত্মদান করেছে তা সমস্ত ভাষার জন্য প্রতীক হয়ে গেছে। তাই বাংলা ভাষার যে সম্মান যে শক্তি তা এখন বিশ্ববাসী জানে। সেই সম্মানকে আরও সমৃদ্ধ করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বৈঠকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘আজকে যখন ভাষা রক্ষার জন্য সংগ্রম চলছে, তখন বলতেই হচ্ছে বাংলা ভাষাকে জীবিকার ভাষা করতে না পারলে আমাদের ভাষা পিছিয়ে যাবে। যদি বাংলাকে জীবিকার ভাষা করা যায় তাহলেই বাংলা ভাষা হাজার বছর ধরে টিকে থাকবে।’
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘আরবি ভাষা জীবিকার ভাষা হয়েছে বলেই বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ আজ আরবি শিখছে। দক্ষিণ কোরিয়ারর ভাষা পর্যন্ত শিখছে, জাপানী ভাষা শিখছে। আমাদের ভাষাকেও জীবিকার ভাষা হতে হবে। একটা সময় আমাদের ভাষা জীবিকার ভাষা ছিলো বলেই ফোর্ট উইলিয়াম বাংলা ভাষার শিক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। সেটা যতটা না আমাদের প্রয়োজনে তারচেয়ে বেশি তাদের স্বার্থে। তাই ভাষার যে শক্তি সেই ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।’
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. রতন সিদ্দিকি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. বিশ্বজিত চন্দ, ড. হামিদা আক্তার,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ।