প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪২ পিএম
একুশের বইমেলায় মানসম্পন্ন প্রকাশনা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদের অতিথি সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণসহ প্রতিযোগিতার বিচারকদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের বিতার্কিকদের দেখা যাচ্ছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
তিনি বলেন, জীবদ্দশায় এন্ড্রু কিশোরের মতো গুণী গায়ককে সম্মানীত করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী কষ্ট পেয়েছেন। এখন থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) এটির আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি ঘোষিত একুশে পদক প্রসঙ্গে সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘সঙ্গীতে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা একজন আরেকজনের সমালোচনা করবেন না, বিরুদ্ধে যাবেন না। যাদের অবদান আছে তাদেরকেও পরে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।’
এবারের বইমেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলায় কয়েকজন ব্যক্তির বিতর্কিত প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের ক্ষোভ ও প্রতিরোধ সঠিক ছিল। মেলায় তাদের উপস্থিতি প্রতিরোধ করা ছিল যুক্তিসঙ্গত। নীতি-নৈতিকতাহীন প্রকাশনার বিপক্ষে জনগণের এই প্রতিবাদকে আমরা সম্মান করি।’
সংস্কৃতি সচিব আরও বলেন, ‘বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বই পড়ার চেয়ে টিকটক ও ফেসবুকের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করে; যা জ্ঞানভিক্তিক সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক নয়। কলকাতা বইমেলায় অর্ধেকেরও বেশি দর্শনার্থী বই কিনে থাকে। গুণগত প্রকাশনাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমিতে তরুণ লেখকদের প্রশিক্ষণ পুনরায় শুরু হচ্ছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও রচনা সামগ্রীকে সংরক্ষণ এবং জনগণের কাছে এই সংক্রান্ত তথ্য উম্মুক্ত করার জন্য নজরুল জাদুঘর তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া মনিষী যাদুঘর, সঙ্গীত জাদুঘর ও ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। “মানসম্পন্ন প্রকাশনাই পারে একুশের বইমেলাকে সার্থক করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে শরিয়তপুরের মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘একজন প্রান্তিক দই বিক্রেতা যিনি নিজের সমস্ত উপার্জনের বিনিময়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে চলেছেন তাকে একুশে পদক প্রদান করার সিদ্ধান্ত প্রশংসণীয়। তবে যদি দেশের কিংবদন্তিতুল্য প্রয়াত সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার সুবল দাস, আলাউদ্দীন আলী, আলী হোসেন, আইয়ুব বাচ্চু, প্রবাল চৌধুরীর মতো বরেণ্য ব্যক্তিদের একুশের পদক প্রদান বিবেচনায় নেওয়া হলে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। প্রখ্যাত শিল্পী নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম, উমা চৌধুরী, শাকিলা জাফর, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, নকীব খান, জেমস—এর মতো শিল্পীদের সম্মানিত করলে একুশে পদকের মর্যাদা আরও বাড়ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছরের বইমেলায় নতুন নতুন বইয়ের ছড়াছড়ি হলেও কতটি বই মানসম্পন্ন হচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কতটা বই পাঠক নন্দিত হয়েছে, কতটা বই শিক্ষণীয়। কতটা বই রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রেখেছে তা নিয়ে নানানরকম মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন একুশের বই মেলায় প্রকাশিত বই এর মধ্যে অধিকাংশ বই—এর প্রচ্ছদ, লেখা, ছাপা, অলংকরণ মানসম্পন্ন হয়নি। কিছু কিছু বই আছে যার প্রচ্ছদ ও অলংকরণের সঙ্গে ভেতরের লেখা বা কনটেন্টের কোনো মিল নেই। আবার কিছু কিছু বই দেখে মনে হবে লেখার বেশিরভাগ অংশই কাটপেস্ট। আবার কেউ কেউ মনে করেন মেলায় আগত বইয়ের গুণাগুণের বাদ বিচারের চেয়ে লেখক ও পাঠকের সম্মিলনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাবরিনা, তৃষা—মোস্তাক, হিরো আলম বইমেলায় নিছক কৌতূহল তৈরি করতে পারে। তাদের ভাইরাল কর্মকান্ডে বইমেলার ইমেজের ঘাটতি ঘটবে না। ভালো লেখক তৈরির জন্য উপযুক্ত সম্মানী, লেখার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সম্মানবোধ তৈরি করতে হবে। ভালো লেখকের পিছনে প্রকাশকরা ঘুরে। লেখার মান ভালো না হলে লেখককে প্রকাশকের পিছনে ঘুরতে হয়। তবে পাঠককে উদ্বুদ্ধ করতে ভালো লেখার পাশাপাশি ভালো প্রকাশকও দরকার।’
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, জোসিন্তা জিনিয়া, সাংবাদিক জিয়াউল হক সবুজ, সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয় ও সাংবাদিক সাদিয়া চৌধুরি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।