× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিআরটির সুফল নিয়ে এখনই প্রশ্ন

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০২ এএম

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০৫ এএম

বিআরটির সুফল নিয়ে এখনই প্রশ্ন

যানজট নিরসন ও সহজ যাতায়াতের জন্য বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। তবে দেশের প্রথম বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প যোগাযোগব্যবস্থায় কতটা স্বস্তি আনতে পারবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ মাহাসড়কে যানজটের আয়োজন চলছে বলে উল্টো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মহাসড়ক সরু হয়ে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও মূল সড়কের অর্ধেক অংশে যান চলাচল করছে। প্রকল্পের ফ্লাইওভারগুলো উন্মুক্ত থাকায় এখন যানজট তুলানমূলক কম। তবে বিআরটি লেনে ডেডিকেটেড বাস চলাচল শুরু হলে দুই পাশের সড়কে গাড়ির চাপ বাড়বে। 

তারা আরও বলছেন, সংকুচিত ও জনবহুল এলাকার এমন সড়কের মধ্যে বিআরটির মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ঢাকা মহানগরী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীর যাত্রীদের পাশাপাশি রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তত ২৫ জেলার যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। বিআরটি প্রকল্প সফল হলেও এর সুবিধা শুধুমাত্র ঢাকা-গাজীপুর রুটের যাত্রীরা ভোগ করবে। এর বাইরে আঞ্চলিক বাসসহ ২৪ জেলার বাস চলবে নিচের সড়ক দিয়ে। এতে আবারও যানজটে থমকে যেতে পারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছর মেয়াদ ছিল প্রকল্পটির। এই সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরুই করতে পারেনি বিআরটি। তিন দফা প্রকল্প সংশোধন করে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। 

শুরুতে বিআরটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের তিন দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক ইলিয়াস শাহ বলেন, আমরা আশা করছি এই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে। প্রকল্প শেষ হলেও যানজট বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেষ না হলে কিছু বলতে পারব না। আপাতত আমাদের লক্ষ্য প্রকল্প শেষ করা। এরপর ইমপেক্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অনেকে দেশেই বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) রয়েছে। তবে সেগুলো করা হয়েছে সমতল সড়কে। গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কে অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ করে প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয়েছে। বিআরটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ডেডিকেটেড বাস ছাড়া সড়কে অন্য কোনো পরিবহন চলাচলের সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই প্রকল্পে সব একসঙ্গে রাখার করাণে শুরুতেই হ-জ-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরাও

এই প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মন্ত্রী-এমপিরাও প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জনভোগান্তি ও জটিলতা বিবেচনায় প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশ বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি লাইন নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে এসেছে সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এত বড় একটি মহাসড়কের ফুটপাথ কোথায় থাকবে? ফুটপাথ না থাকলে শ্রমিক অধ্যুষিত এই এলাকার মানুষজন হাঁটবে কোথায়? এমন জনবহুল ও ব্যস্ত সড়কে বিআরটি প্রকল্প এভাবে হয় না। আমার মনে হয় অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকল্প টেকসই হবে না। তাই এখনই বিকল্প সমাধান খোঁজে বের করা উচিত। 

তিনি বলেন, এই সড়েকর পাশে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের লাইন। ড্রেন বা সড়কের সংস্কার কাজ প্রয়োজন হলে গাড়ি চলবে কীভাবে? বিআরটির করিডোর বাদ দিলে যে জায়গা থাকে তা দিয়ে দুটি গাড়ি একসঙ্গে ভালোভাবে চলাচল করতে পারবে না। 

গাজীপুরের দুজন সংসদ সদস্য প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের একজনের ভাষ্য, আমাদের মতামত উপেক্ষা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি এখানে কেন করা হলো, কার স্বার্থে করা হলো তা বুঝতে পারছি না। 

অন্যজন বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগের চেয়ে বেশি যানজট হবে। ফলে স্থবির হয়ে যেতে পারে পুরো গাজীপুর। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এসব বলতে পারি না। কিন্তু নিজের কাছে খারাপ লাগে। মানুষ ভোট দিয়েছে, কয়দিন পর গালাগালি করবে।

গাজীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সরকার রাসেল বলেন, সরকার প্রকল্পটি নিয়ে এক যুগ আগে পরিকল্পনা করেছিল। এই সময়ে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। সামনের সময়গুলোতে আরও বাড়বে। বিআরটি চালু হলে কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বাস মালিকরা যানজটের আশঙ্কা করছেন। 

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ প্রকল্প নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। মূল সড়কের মাঝখানে করিডোরের জন্য জায়গা কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যানজট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা আশা করব গাজীপুরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের মানুষের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। তবে স্থানীয় অনেকেই আমার কাছে আসছেন, তাদের আশঙ্কার কথা বলছেন। আমি মনে করি বিআরটি প্রকল্প চালু করতে হলে পুরোটাই যেন ফ্লাইওভার করে দেওয়া হয়। এতে নিচের সড়কে চাপ কিছুটা কমবে। এর বিকল্প এই মুহূর্তে কিছু আছে বলে আমরা মনে হয় না। 

সাধারণ পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত রাখার পরামর্শ

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিমানবন্দর-জয়দেবপুর বিআরটি খণ্ডিত ও ত্রুটিপূর্ণ। এরপরও পুরো সড়ক গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর যানজট থেকে স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু এখানে ডেডিকেটেড বাস চলাচল শুরু হলে পরিবহন পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে। আবার যানজট বাড়বে। এ এলাকার শিল্পাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তিনি বলেন, এই করিডোরের জন্য বিশেষায়িত বাস না কিনে সাধারণ বাস চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ভালো হবে। এ প্রকল্পের জন্য বাস কিনলে পুরো টাকা গচ্চা যাবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে বিআরটি না ভেবে এখন যদি করিডোর উন্নয়ন চিন্তা করা হয়, তাহলে তা সফল হবে। এভাবে মনে করতে হবে, একটি অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে কিছু ক্ষতি হয়েছে। বিআরটির নামে খণ্ডিত ও ত্রুটিপূর্ণ বিআরটিতে বাস চালালে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে সরকার। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, হাইওয়েগুলোর আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে, সেখানে সাধারণত দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচল করার কথা। কর্তৃপক্ষেরও উচিত হাইওয়েতে সে অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা। হাইওয়ের কোনো এক জায়গায় যানবাহন বাধাগ্রস্ত হলে পুরো সড়কেই তার চাপ পড়বে।

তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মাহাসড়কের বিআরটি প্রকল্প এলাকায় কোনো এক জায়গায়ও যদি সড়ক সংকীর্ণ থাকে এর প্রভাবে যানজট তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংকীর্ণ জায়গা জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের কোথাও বিআরটি প্রকল্পের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করে না। কোনো নদী নেই, খাল নেই, তারপরও ফ্লাইওভার কেন তৈরি করা হলো। 

তিনি বলেন, নতুন বাস না কিনে ওই রুটকে ‘ঢাকা নগর পরিবহনের’ সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করলে সরকারের অর্থের অপচয় রোধ হবে। না হলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোরে যানজট বাড়বে। যেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা