× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

একুশের রক্তঝরা আমতলায় এখন কোটি টাকার খেলা

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭ এএম

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৭ পিএম

ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলায় সেই রক্তাক্ত প্রান্তরে অবৈধ দোকান বসিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন প্রভাবশালীরা। প্রবা ফটো

ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলায় সেই রক্তাক্ত প্রান্তরে অবৈধ দোকান বসিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন প্রভাবশালীরা। প্রবা ফটো

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষাশহীদদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানোর তোড়জোড় শুরু হয়। অথচ যে স্থানটি বায়ান্নর আন্দোলনমুখর সময়ে ভাষাসংগ্রামীদের বুকের তাজা রক্তে ভেসে গিয়েছিল, সেই স্থানটি চলে গেছে হকারদের দখলে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলার সেই রক্তাক্ত প্রান্তরে অবৈধ দোকান বসিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন প্রভাবশালীরা। 

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটি দোকানপাট বসিয়ে ঘিঞ্জি করে রাখা হয়েছে। সারা বছর দোকানপাট ও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি থাকে এ স্থানটি। ওপরের সাইনবোর্ড না দেখলে জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝার কোনো উপায় নেই। তা ছাড়া জঞ্জালের ভিড়ে ওই সাইনবোর্ডও সহজে চোখে পড়ে না। 

সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় থাকা এ স্থানে ফেব্রুয়ারি মাস এলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চলে। তবে উচ্ছেদের পর আবার হকারদের দখলে চলে যায় ঐতিহাসিক আমতলা।

 তিন স্তরের দোকানে ঢাকা পড়েছে আমতলা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সীমানা ঘেঁষে পুরো এলাকায় তিন স্তরে দোকান সাজানো আছে। মূল ফুটপাথ দখল করে দোকান চলে এসেছে অর্ধেক সড়ক পর্যন্ত। এরপর আবার ভ্যানে করে মালামাল বিক্রি করা হয়। 

এই তিন-চার স্তরের পেছনে অন্ধকার গেটের ওপরের দিকে ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড। যেখানে লেখাÑ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ থেকে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এই দিনে ছাত্রসমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে’। এই সাইনবোর্ডের সামনেও ঝুলছে নানা বিজ্ঞাপনসংবলিত ব্যানার ও পোস্টার। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকসানা ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতিহাস থেকে জেনেছি ক্যম্পাসের সামনের এই জায়গা থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল হয়েছিল। স্থানটি আমাদের কাছে আমতলা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সেই আমগাছটিও আর নেই। ঐতিহাসিক এই জায়গাটি এভাবে শনাক্তহীন অবস্থায় পড়ে থাকা দুঃখজনক।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেন, ‘যে জায়গায় পাকিস্তানি পুলিশের বুলেটে লুটিয়ে পড়েছিলেন ভাষাসংগ্রামীরা, সেই জায়গাটি সংরক্ষণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম এই ইতিহাস একদিন ভুলেই যাবে।’ 

২৫ কোটি টাকার বাণিজ্য

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐতিহাসিক এই জায়গাটি অবহেলিত থাকলেও এখন থেকে বছরে কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য হচ্ছে। তিন সারিতে শতাধিক দোকান বসিয়ে এখান থেকে চাঁদা আদায় করছে একটি অসাধু চক্র। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দুজন নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মদদে এখানে এসব দোকান বসানো হয়েছে। এখান থেকে মাসোহারা পান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্যও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকারভেদে বিভিন্ন দোকান অনুযায়ী দৈনিক ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেন হকাররা। ভাতের হোটেল, রুটির দোকান, ফলের দোকান, বাদাম, চা, প্লাস্টিকের বালতি, মগ, টুল, চেয়ার, বালিশ, চাদর, মাদুর, মশারি, জুতা, প্রসাধনী দ্রব্য, ফল, পান-সিগারেট, পুরি-শিঙাড়া ও মেডিকেলের রোগীদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি হয় এসব দোকানপাটে। গড়ে ৭০০ টাকা ধরলেও প্রতিদিন চাঁদা আদায়কারীরা পকেটে তোলে ৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এই জায়গা থেকে বছরে অন্তত ২৫ কোটি টাকার চাঁদা ওঠে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানি জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজের ফুটপাথের চাঁদা ঢাকার অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এখানে দিনরাত বেচাকেনা চলে। তাই বেশি টাকা দিয়েও দোকান নিয়ে থাকেন তারা।

রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ 

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটি শুধু ঐতিহাসিক স্থানই নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসে। তাই এই জায়গাটা দখলমুক্ত রাখা মেডিকেল কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে থাকি। গত সোমবারও উচ্ছেদ করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় জায়গাটি দখলমুক্ত থাকতে পারে।’ 

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনও চাইলে উচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা