প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩২ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৯ এএম
রাজধানীর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের শত্রুরাই গণমাধ্যমের শত্রু। সাংবাদিকরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন। আমাদের বুঝতে হবে গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকে না। তাই গণমাধ্যমকে বাঁচাতে হলে সর্বাগ্রে দরকার গণতন্ত্র। গণতন্ত্র না থাকায় সাংবাদিকদের খুন-গুম, হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার উদ্যোগে নগরীর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বিএফইউজের নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখন বিভক্ত। এর সুযোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু সময় একই রকম যাবে না। যে সাংবাদিক সত্য লিখবে তার নামেই মামলা হবে। কেউ মামলা থেকে রেহাই পাবে না। তাই মামলা খাওয়ার আগেই সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা কখনও সত্য প্রকাশকে সহ্য করতে পারে না। এ কারণে সাংবাদিকরা বারবার গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারপরও সাংবাদিকরা সত্য লেখা থেকে পিছপা হচ্ছেন না।’
মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজে সহকারী মহাসচিব ও এমইউজে খুলনার সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক শাওন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম।
এমইউজে খুলনার সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয় ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানার পরিচালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনার আহবায়ক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর মাজহারুল হান্নান, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনার সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. সেখ মো. আখতার উজ জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও এমইউজে খুলনার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন। বক্তব্য দেন, এমইউজের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক আজীজী, সাবেক নির্বাহী সদস্য হারুন অর রশীদ, সিনিয়র সদস্য এরশাদ আলী, জি এম রফিকুল ইসলাম, কেএম জিয়াউস সাদাত, সামশুল আলম খোকন, শেখ শামসুদ্দিন দোহা, বশির হোসেন, সেলিম গাজী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক সৈয়দ আলী হাকিমের লেখা ‘বিশ্বকবি নজরুল’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়। শহীদ শেখ বেলাল উদ্দীনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক মো. আলমগীর শিকদার। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা গোলাম রব্বানী।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এমইউজে খুলনার সদস্যবৃন্দ, খুলনা জেলা সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ, কয়রা, ডুমুরিয়া, চুকনগর, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া খুলনা সাহিত্য পরিষদ, খুলনা সাহিত্য মজলিস, নজরুল গবেষণা পরিষদ, আলীজ একাডেমি নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এমইউজে খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান সংবর্ধিত অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই তারা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাদেরকে এখন সেলফসেন্সরশিপ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষাণলের শিকার হয়ে বন্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ‘আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-প্রেস ফ্রিডমটা নেই। তার যে অবস্থা- এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার তৈরি করেছে, ইতোপূর্বে আর কখনও আমরা লক্ষ্য করিনি। এখন এক সেন্সর নিতে হয় আমাদেরকে- সেলফ সেন্সরশিপ করে দেয়। সবাই ভাবি যে, এটা লেখা যাবে কি যাবে না, আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেতে হবে কি না। এখানে রুহুল আমিন গাজী ভাই বসে আছেন, সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ সাহেব-তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেক সাংবাদিক আছেন যারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এখন পর্যন্ত সেই মামলায় ঝুলছেন।’ তিনি সাংবাদিক সমাজসহ পেশাজীবীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। যে যেখানে আছে সবাই একত্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।’ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণমাধ্যমের উপর খড়গ নেমে এসেছে। ১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা রেখে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবারও ক্ষমতায় এসে দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক দিনকালসহ অসংখ্য পত্রিকা ও দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অসংখ্য টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। ৬০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘এ সরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৬০ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। হত্যাকারীদের বিচার হয় না। কিন্তু, বিরোধী মতের সবাইকে খুঁজে খুঁজে বিচার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে না। দেশে ভোটাধিকার নেই।’