× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন : বিশ্বনেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৮ এএম

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৫০ এএম

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স-২০২৪-এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। ছবি : বাসস

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স-২০২৪-এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। ছবি : বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তহবিল সরিয়ে আনতে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থরক্ষার পথ অনুসরণ করলে কোনো সুফল বয়ে আনবে না।’

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জার্মানিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স-২০২৪-এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি তার প্রস্তাবিত পরামর্শে এ কথা বলেন।

ছয়টি পরামর্শ তুলে ধরার সময় প্রথম পরামর্শ উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঠিক পথে রাখতে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ বছরের শেষনাগাদ আমাদের সবাইকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিশেষ করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে ২০২৫-পরবর্তী একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একমত হতে হবে।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারি এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংঘাতের অনুভূতির বোধ থেকেও অনেক দূরে অনুভূত হয়।’

তৃতীয় পরামর্শে তিনি বলেন, জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।

চতুর্থ পরামর্শে তিনি বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ প্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘকালের অমীমাংসিত সমস্যাটি তাদের সক্ষমতায় বিনিয়োগ করার সুযোগসহ সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের শুধু দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন।

তার পঞ্চম পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণলাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফল দেখাতে হবে।

সর্বশেষ ও ষষ্ঠ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু কর্মসূচির জন্য বেসরকারি পুঁজিপ্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকল্পগুলোর জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এটি সুস্পষ্ট যে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না। সবাইকে জলবায়ুর প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন এখনও গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত। জলবায়ু অর্থায়ন ও এর অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংজ্ঞার অনুপস্থিতির কারণে এটি আরও জটিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সবই নিজস্ব সম্পদ থেকে।

তবে আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর যে ৭-৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন তার তুলনায় এটি এখনও অপর্যাপ্ত। বিষয়গুলোকে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় রাখার জন্য, জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) অনুসারে প্রভাব প্রশমনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, অভিযোজনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এটা সুস্পষ্ট যে, অর্থায়নের বিপুল ব্যবধান বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড চালুর মাধ্যমে দুবাইতে কপ-২৮ একটি ইতিবাচক যাত্রা করেছে। আমরা সন্তুষ্ট যে, তহবিলের জন্য ৭৯২ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আমরা আশা করি তহবিলে অতিরিক্ত প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থায়নের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এখন লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়েছে। ওডিএ এবং অন্যান্য ধরনের জলবায়ু অর্থায়নের বাইরে তহবিল অবশ্যই নতুন ও অতিরিক্ত অর্থ পাবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করা হয় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তহবিলের পরবর্তী কাজ হলো কার্যকর প্রকল্পের জন্য অর্থছাড় শুরু করা। তহবিল তাদের কাছে পৌঁছানো উচিত যাদের সবচেয়ে বেশি  প্রয়োজন। অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ ও নমনীয় করা উচিত। আমরা আশা করি, তহবিলের পরিচালনা পর্ষদ এলডিসি এবং সিডস প্রতিনিধিদের মতামতের বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেবে। আমি অবশ্যই বাংলাদেশকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সহায়তার প্রথম প্রাপক হিসেবে দেখতে চাই।’

বাংলাদেশ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান নগণ্য (বৈশ্বিক নির্গমনের ০ দশমিক ৪৭% এর কম) হলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে। এটা অনুমান করা হয় যে, এখন থেকে ২০৫০ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বার্ষিক জিডিপি ক্ষতি হবে ২%। এ হারে ২১০০ সালের মধ্যে ক্ষতি ৯% পর্যন্ত হবে। আরও অনুমান করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং সহিষ্ণুতার জন্য বার্ষিক বাজেটের প্রায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং জিডিপির ০ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যয় করে, যার ৭৫ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তহবিল এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৮০০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা