× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মার্ট কার্ডের চাপে বিআরটিএ

এস এম রানা, চট্টগ্রাম ও ফয়সাল খান, ঢাকা

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৩ এএম

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০২ এএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গত বছরের মার্চে আবেদন করেন রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা মোটরসাইকেল চালক রুহুল আমিন। এর প্রায় বছর হয়ে গেলেও এখানও কার্ড হাতে পাননি তিনি। দুই দফা তারিখ পরিবর্তনের পর গত রবিবার মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে গেলে আরও দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

একই বছর এপ্রিল মাসে বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা আমান উদ্দিন। তিনি সৌদি আরবে যাবেন ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে। লাইসেন্স সরবরাহের যে তারিখ ছিল সেটি পেরিয়ে গেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। এর মধ্যে দুই দফা বিআরটিএ কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। কবে স্মার্ট কার্ড পাবেন তিনি সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি কর্মকর্তারা।

শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের এ দুই ব্যক্তিই নন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে সারা দেশে বিআরটিএ কার্যালয়গুলোতে মাসের পর মাস ঘুরছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ। মাস পেরিয়ে বছর গড়ালেও কাঙ্ক্ষিত ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। কার্ড সরবরাহ করতে না পেরে গ্রাহকদের চাপে বিআরটিএর কর্মকর্তারাও অস্থির হয়ে পড়েছেন। 

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর অন্তত ৭ লাখ স্মার্ট কার্ড প্রয়োজন। আগের ঘাটতি আছে আরও ৮ লাখ। এর সঙ্গে চুক্তি পরিবর্তনের সময় প্রায় ১২ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। চলতি বছর গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে হলে অন্তত ২৭ লাখ কার্ড প্রয়োজন। অথচ গত সাড়ে তিন বছরে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাত্র ১৬ লাখ কার্ড পেয়েছে বিআরটিএ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বিআরটিএ। চুক্তির দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ২৪ লাখ কার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে কার্ড সরবরাহ করেছে মাত্র ১৬ লাখের মতো।

চুক্তির দিন থেকে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কাজ করবে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ লাখ কার্ড প্রিন্ট করে সরবরাহ করার কথা আছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাহিদা অনুযায়ী কার্ড না পাওয়ায় গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারছে না বিআরটিএ। 

মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) প্রাইভেট লিমিটেডের মানবসম্পদবিষয়ক ব্যবস্থাপক আশরাফ বিন মুস্তফা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এতদিন ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো কার্ড সরবরাহ করা যায়নি। মাদ্রাজের কারখানায় কার্ড প্রস্তুত হয়ে স্তূপাকারে পড়ে আছে। এই কার্ড দ্রুত ডেলিভারি দিতে না পারলে প্রতিষ্ঠানেরই বেশি ক্ষতি। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে কার্ড আমদানি কঠিন করা হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ছোট আকারে ৫০ হাজার লটে কিছু কার্ড এনে সরবরাহ করা হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই পাঁচ লাখ কার্ড আমদানির ঋণপত্র (এলসি) অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে পাঁচ লাখ কার্ড আমদানিপূর্বক বিআরটিএ-কে সরবরাহ করা যাবে। এই পাঁচ লাখ কার্ড সরবরাহ করা গেলে সংকট অনেকাংশেই কমে আসবে। এরপর প্রতি লটে দুই লাখ করে কার্ড সরবরাহের প্রস্তুতি রয়েছে কোম্পানির।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটির কাছে এখন কোনো কার্ড নেই। তারা জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে কার্ড খালাস করতে পারছে না। চুক্তির সময় ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা, এখন পৌঁছেছে ১২৫ টাকায়।

তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানটি কখনোই ঠিকভাবে কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি আমাদের। 

গত রবিবার রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছি প্রায় এক বছর হবে। এখনও কার্ড পাইনি। আর কতদিন ঘুরতে হবে আল্লাহই জানেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক ভুক্তভোগী খিলক্ষেত এলাকার সেলিম মিয়া জানান, ‘একদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছি না, অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের যন্ত্রণা। সব দোষ আমাদেরই। তাদের কোনো দায় নেই।’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা আমান উদ্দিন বলেন, ‘সৌদি আরব যাব। স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড নিতে হবে। না হলে ড্রাইভিং করতে পারব না। এখন আবেদনের পর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যে কাগজপত্র দিয়েছে, সেগুলো দিয়ে সৌদি আরবে ড্রাইভিং করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লাইসেন্স নিয়ে সৌদি আরবে ড্রাইভিং করা যায় না বলে জেনেছি। তবে বাংলাদেশি লাইসেন্স নিতে হবে। আর সেখানে গিয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সৌদি লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেনÑ ‘ভিসা পেয়েছি আগে, লাইসেন্স পেলে বিদেশে যাব বলে ঠিক করেছি। কিন্তু বিআরটিএ আমাকে আটকে দিয়েছে।’ 

চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম আবেদন করেছেন গত বছরের জুন মাসে। ডিসেম্বর মাসে নবায়নকৃত স্মার্ট কার্ড পাবেন বলে লেখা হয়েছে আবেদনে। কিন্তু জানুয়ারি মাস শেষ হলেও তিনি কার্ড পাননি। চলতি জানুয়ারি মাসে দুই দফা তিনি মহানগর ট্রাফিক পুলিশের তল্লশির মুখে পড়েন। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে একবার তল্লাশির মুখে পড়লে সার্জেন্টকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি গাড়ির অন্য কাগজপত্র যাচাই করে ছেড়ে দেন। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা ট্রাফিক পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়ে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাকে। তাই বাধ্য হয়ে ২৯ জানুয়ারি বিআরটিএ অফিসে যান স্মার্ট কার্ডের জন্য। সেখান থেকে জানানো হয়, কার্ড প্রস্তুত হয়ে ঢাকা থেকে আসেনি। কার্ড প্রস্তুত হলে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। বার্তা পাওয়ার পর কার্ড সংগ্রহের জন্য বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে যেতে বলা হয় তাকে। একই সঙ্গে তার আবেদনে কার্ড সরবরাহের মেয়াদ আরও ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। 

বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাস থেকে এক বছরে মেট্রো কার্যালয়ে আবেদন পড়েছে ১৯ হাজার ৫৪টি। আর জেলা কার্যালয়ে ৯ হাজার ৪৩৬টিসহ মোট ২৮ হাজার ৪৯০টি আবেদন পড়ে আছে। যাদের আবেদনের মেয়াদ ছয় মাস পেরিয়ে গেছে বা এক বছর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কার্ড পাননি তারা। এখন বিআরটিএ কার্যালয়ে কার্ডের জন্য যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা তাদের আবেদনে ডেলিভারির সময় বাড়িয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন। কিন্তু কবে নাগাদ কার্ড সরবরাহ করবেন সেই তথ্য দিতে পারছেন না। 

বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) রায়হানা আক্তার উর্থী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো কার্যালয়ে ২৮ হাজার ৪৯০টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব কার্ড প্রিন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রিন্ট হয়ে না আসার কারণে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কার্ডগুলো প্রিন্ট হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছলে মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট চালকদের কাছে খুদে বার্তা যাবে। তখন সেগুলো সংগ্রহ করে নিতে পারবেন চালকরা।’ 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, কার্ড নিয়ে যে সমস্যা, তা বৈশ্বিক সমস্যার একটি অংশ। তবে দেশে গাড়ি চালানোর জন্য এখন বিআরটিএ থেকে ‘ই-লাইসেন্স’ দেওয়া হচ্ছে। কার্ডের এই সমস্যা দ্রুতই কেটে যাবে। বিমানবন্দরে কিছু কার্ড এসেছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই এগুলো ছাড় পাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা