প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৭ পিএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:০২ পিএম
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফাইল ছবি
সারা দেশে অবৈধভাবে চলাচল করা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি সংসদে তোলেন নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। জবাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অটোরিকশাকে ‘বাংলার টেসলা’ আখ্যায়িত করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। একই সঙ্গে এগুলোকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই বাহনকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নে এসব কথা বলেন নসরুল হামিদ।
শামীম ওসমান তার সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। রিকশার মধ্যেও ব্যাটারি লাগানো হচ্ছে। এগুলো খুবই বিপজ্জনক এবং চলাও নিষিদ্ধ। এই অটোরিকশাগুলো রিচার্জ করে বিদ্যুৎ চুরির মাধ্যমে। তারা আমাদের ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। এগুলো একযোগে সারা দেশে বন্ধের কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেবেন কি না, তা জানতে চাই।’
জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কত দ্রুত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে ইলেকট্রিকে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য সারা বিশ্বে এখন একটা রেভল্যুশন চলছে। তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনের দক্ষতার মাত্রা হলো ২০ শতাংশ। অপরদিকে ইলেকট্রিক যন্ত্রের দক্ষতার মাত্রা হলো ৮০ শতাংশ। মূলত আমরা উৎসাহিত করি বাজারে যত দ্রুত পারে ইলেকট্রিক গাড়ি আসুক।’
তিনি জানান, তেলচালিত বাহনে কোনো দূরত্বে যেতে যদি ১০০ টাকা লাগে, বিদ্যুৎচালিত যানে সেই দূরত্বে যেতে লাগবে ২০ টাকা। বাংলাদেশে ৪০ লাখের ওপর যানবাহন আছে। যারা লেড ব্যাটারি ব্যবহার করে। এগুলো চার্জ করতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এগুলো যদি লিথিয়াম ব্যাটারি হয়, তাহলে লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা। বিদ্যুৎ বিভাগ আমরা ইলেকট্রিক গাড়ির ‘চার্জ স্টেশন’ বসানোর নীতিমালা করেছি। এ নীতিমালা করে যে কেউ চাইলে চার্জ স্টেশন করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘এই ৪০ লাখ থ্রি-হুইলারকে আমি বলি বাংলার টেসলা। নিজ হাতে তৈরি করছে। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছে। আমরা তাদের কোনো বাধা দিচ্ছি না। যান্ত্রিকভাবে এতে ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু বিদ্যুৎ যেটা ব্যবহার করছে, তার রিটার্ন কিন্তু অনেক বেশি। এই ৪০ লাখ রিকশাচালক, যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, তারা অবশ্যই আয় করছে। এক্ষেত্রে আমরা লেড ব্যাটারি থেকে তারা যেন লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে আসে— এটা নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প করছি। আমরা লেড ব্যাটারি নিয়ে তাদের লিথিয়াম ব্যাটারি দেব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে যত পাবলিক পরিবহন (বাস) আছে, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুতে নিয়ে আসা উচিত। খরচ কম। পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টর ১৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়টি উদ্বেগের। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত। কোথাও অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় কি না, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো সে বিষয় নজরে রাখছে। বেশিরভাগই এখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ না নিয়ে মিটারের মাধ্যমে নিচ্ছে।’
এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। আর গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট (৪৩ শতাংশ), ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৬ হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট (২৪ শতাংশ), ডিজেলভিত্তিক ৮২৬ মেগাওয়াট (৩ শতাংশ), কয়লাভিত্তিক ৪ হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট (১৭ শতাংশ), হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট (এক শতাংশ), অনগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ ৪৫৯ মেগাওয়াট (দুই শতাংশ), বিদ্যুৎ আমদানি হয় ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট (১০ শতাংশ)।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছর শীতকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।’