প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১১ পিএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:২৫ পিএম
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রবা ফটো
চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবকিছুর খোঁজখবর রাখছেন। আমাদের প্রত্যেকের কাজগুলো যথাযথভাবে করতে হবে। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। দুর্নীতি যাতে কম হয় সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। কেননা যথাসময়ে কাজ শেষ না হলে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।’
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। কর্মশালাটি চলবে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. হুমনাথ বান্দারী, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারের বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জিয়াউকুন সাই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গবেষণা অগ্রগতি ২০২২-২৩ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।
ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে। তবে আমাদের দেশ বর্তমান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারলে বিশ্বের কোথাও মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। ভারতে ৭ হাজার কৃষি বিজ্ঞানী আছে। আমরাও কিন্তু কম না। আগে এক বিঘায় ৭ মণ ধান হতো, বর্তমানে এক বিঘায় ৩০ মণ ধান হচ্ছে। এসব অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীদের অবদানের কারণে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যায় সমৃদ্ধ। এই জনসংখ্যা কাজে লাগাতে হবে। সবাইকে পড়ালেখা করিয়ে দক্ষ করতে পারলে আমাদের এ অবস্থা থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে চালের দাম বাড়লেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি টন চালের দাম ৬০০ ডলার আর দেশে ৫৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।’
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপাত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৬০ থেকে ৭০ পিএইচডি হোল্ডার। প্রত্যেকেই নিজের বিবেকের ওপর দায়বদ্ধ থেকে কাজ করুন। ফিলিপিনকে বিশ্বের মানুষ চেনে ইরির কারণে তেমনি বাংলাদেশের মানুষ যেন ব্রিকে চেনে সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্রি যে জাত উদ্ভাবন করে বিএডিসি তা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের অনেক ডালজাত পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে সে সমস্যার সমাধানও করা দরকার।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, ‘৫২ বছরের সাফল্য সবচেয়ে বেশি কৃষিখাতে। এটি বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গমের উৎপাদন ২৭ ভাগ, ভুট্টার উৎপাদন ৮৮ ভাগ বেড়েছে। ধান উৎপাদন বেড়েছে বেশি পরিমাণে। সরকারের সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতির কারণে কৃষিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। এসব জাতের ধানের মধ্যে ব্রি ২৮, ২৯ ও আমনের দুটি কৃষিখাতে উৎপাদনে বিপ্লব এনেছে।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ‘বিএডিসি উন্নমানের সার, বীজ ও সেচের জন্য কাজ করছে। ব্রিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বীজ এক দুই বছরের মধ্যে কৃষকের কাছে দেওয়া হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে কৃষকের কাছে যেতে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লেগে যায়। এসব গবেষণার ফল অতিদ্রুত কীভাবে পৌঁছানো যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে রবি মৌসুমে অনেক জমি সেচের অভাবে পতিত থাকে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের এক কৃষক। জবাবে আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ‘অচিরেই একটি প্রকল্প পাস হবে। এতে করে সে অঞ্চলে সেচের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
মো. শাহজাহান কবীর জানান, আউসে ব্রি ৯৮, আমনে ১০৩ বীজ উদ্ভাবন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের জাত নিয়ে ধান আবাদ করছে। নতুন জাতগুলো অতি দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে যাবে। জাত উদ্ভাবনের এক বছরের মধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবার বোরোতে ৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে চালের কোনও সংকট নেই। আগামীতেও দেশে ধান ও চালের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।