× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচন কমিশন

উপজেলা নির্বাচন বিধিমালা ব্যাপক সংশোধনের উদ্যোগ

কাজী হাফিজ

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৭ এএম

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৪ এএম

নির্বাচন কমিশন ভবন। ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশন ভবন। ফাইল ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুবিধা দেওয়াসহ নির্বাচন বিধিমালায় বেশ কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিদ্যমান আইনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর যুক্ত করতে হয়। নির্বাচন কমিশন এই বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভুঁইফোড় প্রার্থী এড়াতে প্রার্থীদের জামানতের টাকার পরিমাণ বাড়ানোসহ আরও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার সভাপতিত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি ইসির সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে। বৈঠকে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০১৬’ সংশোধন বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবারও কমিটির বৈঠক রয়েছে।

বিদ্যমান ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৩’তে বলা আছে, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থিতার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে। তবে কোনো স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আগে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাদের জন্য ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকার প্রয়োজন নেই।

গতকালের বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার বিধানটির বিরুদ্ধে মত দেন ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সদস্যরা। কমিটির সদস্যদের মূল্যায়নÑ এই বিধানটি সংবিধানবিরোধী। তাদের মতে, এর বদলে ভুঁইফোড় প্রার্থী ঠেকাতে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে গোপন ভোটের আগেই সংবিধানবিরোধী উপায়ে কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থনদানের বিষয়টি বাতিল করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, হয়তো সচিবালয় কোথাও থেকে ফিডব্যাক পেয়েছে, স্বাক্ষরের বিষয়টি না রাখাই ভালো। আবার অনেকে বলছেন, না রাখলে সমস্যা হবে। এ বিষয়ে মিশ্র মতামত আছে। আমরা এর ভালো-মন্দ দিক বিবেচনা করব। আলোচনা না করে কিছু বলতে পারব না।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর জমাদানের বিধান থাকলেও উপজেলাতে তা কমিয়ে ২৫০ রাখা হয়। এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধানকে সংবিধানবিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন বেশ কয়েক প্রার্থী।

এ ছাড়া সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ দিতে বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার বিধি-১৫ এ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

নির্বাচন কমিশনের ‘আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি’ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করে যাচ্ছে। এর আগে এই কমিটির প্রস্তুতকৃত খসড়া গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ২৭তম সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধনীর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাও হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি উপজেলা নির্বাচনের দুটি বিধিমালা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সুপারিশ কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠাবে। এরপর কমিশন তা চূড়ান্ত করলে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৩ এর সংশোধনীতে ২৬টি সুপারিশ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এ সংশোধনীতে ৮টি সুপারিশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৩ সংশোধনে আরেকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অনলাইন পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের। বর্তমানে সরাসরি অথবা অনলাইন উভয় পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কেবল অনলাইন পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও এবারই প্রথম ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রার্থীরা কিংবা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ শনাক্তকরণ তথ্যাদি রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে। একইভাবে প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্দিষ্টসংখ্যক লোকজন নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ হলোÑ প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে। সমভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুনঃভোটের বিধানের পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে ফল চূড়ান্ত করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ব্যালট পেপারের মুড়িপত্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরের বিধান চালুর প্রস্তাব এসেছে।

ভোটগ্রহণের আগে কোনো প্রার্থী মৃত্যুবরণ করলে এবং মাত্র একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকলে নির্বাচন বাতিল করে নতুন ভোটের কথা বলা হয়েছে। কমিটির প্রস্তাবে নির্বাচনের ফল স্থগিত এবং পুনরায় ভোটগ্রহণের বিধান যুক্ত, আয়কর রিটার্ন দাখিল, নির্বাচনের তফসিল সংশোধন বা নতুন তফসিল ঘোষণার বিধান, একাধিক ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি নির্বাচনী ক্যাম্পে টেলিভিশন ও ভিসিআর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কোনো প্রার্থী একাধিক পদে মনোনয়ন দাখিল না করতে পারার বিধান সংযুক্ত করার বিষয়গুলোও প্রস্তাবে এসেছে। 

উপজেলা নির্বাচনে ভুঁইফোড় প্রার্থীর সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সেজন্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জামানত ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্তের বিধানেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নির্বাচনে যতসংখ্যক ভোট পড়বে তার ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট না পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রদত্ত ভোটের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে।

পোস্টারে পলিথিনের আবরণ এবং প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে। নির্বাচনে শব্দদূষণ কমানোর লক্ষ্যে মাইকের সাউন্ড ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখার বিধান যুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাচন বিধিমালায় নির্বাচনী দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভীতি ও বাধা দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। জাতীয় সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তার হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে বিধিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। নির্বাচন বিধিমালায় আরও যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ নির্বাচনী ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা, নির্বাচন প্রচার পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠন করা এবং উপজেলা নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া। যদিও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা