অস্থির চালের বাজার
ঝিনাইদহ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০৬ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১১ পিএম
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। প্রবা ফটো
আড়তদারদের সঙ্গে মিলমালিকদের যোগসাজশ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ বিষয়ে মিলমালিক, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাসহ অংশীজনদের নিয়ে এক সভায় তিনি এ কথা স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ওই সভা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আড়তদারদের সঙ্গে মিলমালিকদের যোগসাজশ রয়েছে। ধান, চালসহ খাদ্যদ্রব্য মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে। আমরা বসে নেই যে মজুদদারদের ধরছি না। ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের মজুদ করতে পারবে না।’
এ সময় মন্ত্রী দেশের কয়েকটি স্থানে মজুদদারদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযানের চিত্র তুলে ধরেন।
মাসখানেক আগে বাজারে আমন ধান আসায় এখন চালের দাম কমার কথা। অথচ বাজারের চিত্র ভিন্ন। সব ধরনের চালের দামই কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে ক্রেতারা। তারা বিস্ময় ও ক্ষোভের পাশাপাশি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বিক্রি-বাট্টা কমে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন খুচরা দোকানিরা। অসময়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য আড়তদাররা দুষছেন চালকল মালিকদের। পাল্টা অভিযোগ করছেন চালকল মালিকরাও।
এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন কৃষকদের কাছে ধান থাকে না। খুচরা থেকে শুরু করে মিলমালিক ও করপোরেট পর্যন্ত সুবিধা নিয়ে থাকে। পাকা মেমো ছাড়া মিল গেটে চাল বিক্রি করা যাবে না। করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চালকল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ধান মজুদ করার কোনো সুযোগ নেই। ধান গোডাউনে ঢুকবে, ধান বেরিয়ে যাবে। ঝিনাইদহে যে চাল দুই টাকা করে বেড়েছে তা কোনো মিলমালিক স্বীকার করেন না। বরং আমিই বলেছি কুষ্টিয়া থেকে চালের এই দাম বেড়েছে। তারা এই মিটিংয়ে বলে গেছেন কোনোভাবেই দাম আর বাড়বে না।’
জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান হোসাইনী, খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ ।
মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে সরকারের ব্যর্থতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিসি, ভোক্তা অধিকার, মার্কেটিং কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি, তারা যদি মনিটরিং করে একদিন একসঙ্গে মার্কেটে নামেন এবং এ বিষয়ে কোনো ব্যত্যয় পান, কঠোরভাবে মোবাইল কোর্ট করতে থাকেন। যদিও আমরা চাই না মোবাইল কোর্ট করে কাউকে অপমান করি। যদি আমাদের কেউ বাধ্য করায় তবে মোবাইল কোর্ট হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক বছর চাল আমদানি করিনি। এখনও যে পরিমাণ চাল আছে তাতে এখনও চাল আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। সরকারিভাবে চাল আমদানি করছি না। বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য ট্যাক্স জিরো করে অনুমতি দিয়ে রাখব। যদি কোনো ম্যাসাকার না হয় সেজন্য একটি পথ খোলা থাকল।’
আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার মতো কোনো শঙ্কা নেই বলেও জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। কোনোভাবেই যেন দাম বৃদ্ধি না হয় বা কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। রমজানে ব্যবহৃত ভোগ্যপণ্য– ছোলা, খেজুর, চিনিসহ অন্যান্য জিনিসের দামের পরিপ্রেক্ষিতে গতবার যে পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছিল, এবার তারচেয়ে অনেক বেশি এলসি খোলা হয়েছে। সুতরাং রমজানে দাম বাড়ার কথা না।’