× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিয়ানমারে সংঘাত

মাঝেমধ্যেই মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৬ এএম

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভেতরে চলে আসছে। বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তবর্তী কোনাপাড়া ও পশ্চিমকুল পাড়া এলাকার দুটি বাড়ির উঠানে তিনটি মর্টার শেল এসে পড়ে। প্রবা ফটো

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভেতরে চলে আসছে। বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তবর্তী কোনাপাড়া ও পশ্চিমকুল পাড়া এলাকার দুটি বাড়ির উঠানে তিনটি মর্টার শেল এসে পড়ে। প্রবা ফটো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে। উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ এখন উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকা অনেকটা নীরব। মানুষগুলো বের হচ্ছে না বাড়ি থেকে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংঘাত মিয়ানমারের ভেতরে হলেও সে দেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের ছোড়া গোলাগুলি, মর্টার শেল মাঝেমধ্যেই এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে; বসতবাড়ি ও ধানি জমিতে। সীমান্তের খুব কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে ঘন ঘন, যা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে সীমান্তবাসী বাংলাদেশিদের মনে। চাষাবাদের কাজ করতেও ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা। তা ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, দোছড়ি ও বাইশারী ইউনিয়নের অন্তত ২২ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে কোথাও কোথাও।

ঘুমধুম পশ্চিমপাড়ার আবু সিদ্দিক বলেন, দুপুরের দিকে একটি মর্টার শেল পড়ে বিকট শব্দ হলে এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যদিনের কাজ করতে এমনকি শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা। ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরজাহান বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পার্শ্ববর্তী সীমান্তের ওপারে কয়েক দিন পরপর গোলাগুলি হয়। ভারী গোলার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। কোন সময় গোলাগুলি শুরু হয় তা বলা মুশকিল। এমন পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে খুব ভয় লাগে।

গোলাগুলি শুরু হলে ভয়ে কাঁচাঘরের বাসিন্দারা পাড়ার বা কাছাকাছি পাকা দালানে গিয়ে আশ্রয় নেন বলে জানান তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে যখন আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছিল, তখন অন্যের ঘরে আশ্রয় না পেয়ে সীমান্ত সড়কের ওপারে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২০টি বেশির মর্টার শেল এসে পড়ার তথ্য রয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। সীমান্তের ৩৩-৩২ নম্বর পিলার এলাকার মানুষের চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যও স্থবির। জনমানবহীন হয়ে পড়েছে বাজারগুলো। দোকানে তেমন বেচাবিক্রি নেই। অনেকেই বন্ধ রেখেছেন দোকানপাট। কখন যেন উড়ে এসে পড়ে গোলা- এমন আতঙ্ক সর্বত্র। তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হামিদুল ইসলাম জানান, গোলাবর্ষণের কারণে বিক্রয় প্রতিনিধিরা এখন আর আসছেন না। ফলে পণ্য সংকট বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ডিসি-এসপির সীমান্ত পরিদর্শন

গুরুতর পরিস্থিতির খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন ও বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন। তারা সীমান্তবাসীর সঙ্গে আলোচনা করেন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা বলেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে। পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, সীমান্তে গত কয়েক দিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্য সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি। 

পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিপজ্জনক এলাকায় বসবাসকারীদের প্রয়োজনে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র। পরিস্থিতি খারাপ হলে অবস্থা বুঝে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

টেকনাফ সীমান্তেও বিস্ফোরণের শব্দ

বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়া ও জাদিমোরার লালদিয়া সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আবারও থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, বুধবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মর্টার ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি।

বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। 

কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিজিবির পাশাপাশি টহল-নজরদারি জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে মানব পাচার, চোরাচালান, মাদকদ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ হতে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত দিন-রাত নিয়মিত অত্যাধুনিক হাই স্পিডবোটের মাধ্যমে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। টেকনাফ, শাহপরী, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশের জানমালের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ড সদা প্রস্তুত রয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বান্দরবান প্রতিবেদক, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিবেদক ও কক্সবাজার অফিস

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা