মন্ত্রিসভা
ফসিহ উদ্দীন মাহতাব
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪২ এএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৩০ পিএম
নির্বাচন কমিশন ভবন। ফাইল ছবি
স্থানীয় পর্যায়ে (সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে আগামীতে রাজনৈতিক দলের প্রতীক আর থাকছে না। অতীতেও স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী পরিচয়ে কোনো নির্বাচন ছিল না। মাঝখানে ২০১৫ সালে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। যার ফল হিসেবে ওই সময় থেকে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভের কারণে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চাইছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। এবার বিষয়টিকে আইনি কাঠামোতে আনতে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন হতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সংশোধিত আইনে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের (৪৮ক) দফা ‘রাজনৈতিক দল’ সংজ্ঞা বাতিলের প্রস্তাব রেখে মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। (খ) দফা ঘ (৫৫) এরপর (৫৫ক) সন্নিবেশিত করা হয়। (৫৫ক)-তে বলা হয়, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ অর্থ এইরূপ কোনো প্রার্থী যিনি রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়নপ্রাপ্ত নহেন’ এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধারা পাস হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না প্রার্থীরা। গত বছর ৯ অক্টোবর সিটি করপোরেশন (সংশোধন) আইনের খসড়া অনুমোদন দিলেও পরবর্তীতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা।
এছাড়াও আইনটি পাস হলে করপোরেশনভুক্ত এলাকায় বৃষ্টিজনিত পানির ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজটি করবে সিটি করপোরেশন। এখন এক ধরনের চুক্তির মাধ্যমে এই কাজ করে সিটি করপোরেশন। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘স্থানীয় (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইনের খসড়া অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের সচিবের পদের নাম পরিবর্তন করে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। এই পদটি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার’ নিচের পদ হবে।
মেয়র ও কাউন্সিলরদের বছরের ছুটিও কমানো হচ্ছে। খসড়া অনুযায়ী, এখন মেয়র ও কাউন্সিলরদের ছুটি হবে বছরে এক মাস। এতদিন তারা তিন মাস পর্যন্ত এই ছুটি নিতে পারতেন। এ ছাড়া আগে কোনো কাউন্সিলেরর পদ ছুটিজনিত বা কোনো কারণে শূন্য হলে, পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের ওই সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হতো। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শূন্য হলে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এই দায়িত্ব পালন করবেন। সিটি করপোরেশনভুক্ত কোনো ব্যক্তিমালিকানা বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানার রাস্তা যথাযথভাবে সংস্কার বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা হলে, জরিমানা করার ব্যবস্থা থাকবে।
২০০৯ সালের ৬০ নং আইনের ধারা ২ এর সংশোধনে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০১৫ (২০০৯ সালের ৬০ নং আইন) এর ২ ধারা-এর (ক) দফা (৪৮) সন্নিবেশিত করে আইনের ধারা সংশোধন করা হয়। এতে (৪৮ক) ‘রাজনৈতিক দল’ অর্থ রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার-১৯৭২ আর্টিকেল-২ সংজ্ঞায়িত করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নামে যুক্ত করা হয়। (খ) দফা ঘ(৫৫) এরপর (৫৫ক) সন্নিবেশিত করা হয়। (৫৫ক)-তে বলা হয়, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ অর্থ এইরূপ কোন প্রার্থী যিনি রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়নপ্রাপ্ত নহেন।
‘৬০ নং আইনের নতুন ধারা ৩২ক-এর সন্নিবেশ করা হয় ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ-ধারা ৯-এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দল থেকে মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হইতে হবে।’ ধারা ৩৫-এর উপ-ধারা (২)-এর পূর্বে উল্লিখিত বিদ্যমান বিধানটি উপ-ধারা (১) সংজ্ঞায়িত করে ২০১৫ সালে ২৬ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এবার সংশোধিত আইনে এসব ধারা বাতিল করে (খ) দফা ঘ(৫৫)-এর পর (৫৫ক) সন্নিবেশিত করা হয়। (৫৫ক)-তে বলা হয়, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ অর্থ এইরূপ কোনো প্রার্থী যিনি রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়নপ্রাপ্ত নহেন’ এমন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের রাজনীতিতে বিভাজন ঠেকাতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রেখেছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৫ সালের পর থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরুর পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপাকেও পড়তে হয়েছে। অতীতে একজনকে প্রতীক দিলে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তাতে দলীয় শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি তৃণমূলে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে। একেক নেতা একেক প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যেন এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার করা না হয়।