× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রাম আদালত সংশোধন আইন উঠছে মন্ত্রিসভায়

পনেরো দিনেই বিচার, সর্বোচ্চ জরিমানা তিন লাখ টাকা

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:০১ পিএম

পনেরো দিনেই বিচার, সর্বোচ্চ জরিমানা তিন লাখ টাকা

উচ্চ আদালত, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব আদালতে মামলার চাপ ও জট কমাতে চায় সরকার। চায় স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের কাছে বিচারব্যবস্থার সুযোগ পৌঁছে দিতে। এ কারণে গ্রাম আদালতকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে, বাড়ানো হচ্ছে এর কর্মপরিধি। এমন প্রেক্ষাপটে আইন করা হচ্ছে যে, এক মাস নয় বরং ১৫ দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে। পাশাপাশি জরিমানাও বাড়িয়ে ৭৫ হাজার থেকে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। নাবালক শব্দের পরিবর্তে শিশু শব্দ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গ্রাম আদালতও হাজিরা, সাক্ষী অথবা কোনো দলিল দাখিল করার জন্য সমন দিতে পারবে। 

এসব বিধান রেখে ‘গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে চলেছে সরকার। আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি অনুমোদন পেতে পারে। সিটি করপোরেশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪-এর চূড়ান্ত খসড়াও অনুমোদন পেতে পারে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আইনটি মন্ত্রিসভা থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। তবে জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন হওয়ার কারণে গ্রাম আদালত সংশোধন আইন, ২০২৩-এর খসড়া বিল আকারে একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আইনটি নতুন করে অনুমোদনের প্রয়োজন হচ্ছে। আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’

সচিব আরও বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গ্রাম আদালতকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ আদালতকে শক্তিশালী করতে পারলে জেলা পর্যায়ের আদালতসমূহে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার জায়গা হিসেবে গ্রাম আদালত আস্থা অর্জন করেছে।’

প্রসঙ্গত, বিদ্যমান গ্রাম আদালত আইন বাস্তবায়নের সময় মাঠপর্যায়ে অনেক সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে ন্যায়বিচার সহজ করতে আইনটির সংশোধনী আনতে উদ্যোগী হয় সরকার। এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়। এরপর আইনি কাঠামো আবারও পর্যালোচনা করে ‘গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন-২০২৪’ প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আইনে ৮টি ধারা সংশোধন ও ২টি নতুন ধারা সংযোজন এবং তফসিলে সংশোধনীর প্রস্তাব আনা হয়।

গত ২০২২ সালের ২৫ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর লেজিসলেটিভ বিভাগ থেকে আইনের খসড়ার ভেটিং সম্পন্ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়। একই বছর ২৩ অক্টোবর আইনের খসড়াটি আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে চূড়ান্তভাবে অনুমোদনও দেওয়া হয়। তবে গত বছর ২ নভেম্বরে জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন হওয়ায় সময়ের অভাবে ‘গ্রাম আদালত সংশোধন আইন, ২০২৩’-এর খসড়া বিল আকারে একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এর খসড়া অনুমোদনের প্রয়োজন মনে করে সরকার। এ প্রেক্ষিতে আইনটি স্থানীয় সরকারর বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংশোধনী আইনে বিচার নিষ্পত্তির সময়সীমা ৩০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করা হচ্ছে। গ্রাম আদালত কর্তৃক তফসিলের প্রথম অংশের বর্ণিত অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা ৭৫ হাজার টাকার পরিবর্তে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘নাবালক’ শব্দের পরিবর্তে ‘শিশু’ শব্দটি প্রতিস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ভার ও ব্যবস্থাগত জটিলতার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৬ হাজার ৪৪টি মামলা উচ্চ আদালত থেকে গ্রাম আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে। বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে গ্রাম আদালত। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে দেশের গ্রাম আদালতগুলোতে মামলা হতো ছয় থেকে সাত হাজার। গত কয়েক বছরে ২৭ জেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৭টি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা ৮৪ শতাংশ। এই সময়ে ১৮৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের আইনগত প্রতিকার লাভের জায়গা হিসেবে ক্রমেই গ্রাম আদালত আস্থা অর্জন করেছে।

গ্রাম আদালতের রূপরেখা 

সালিশি ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ জারি হয়। ২০০৬ সালের গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষ মনোনীত দুজন করে মোট চারজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করা হয়। তবে প্রত্যেক পক্ষ মনোনীত দুই সদস্যের মধ্যে এক সদস্যকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান। তিনি কোনো কারণে তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা তার নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উঠলে, পরিষদের অন্য কোনো সদস্য আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো পক্ষ সদস্য মনোনয়ন না দিলে ওই মনোনয়ন ছাড়াই আদালত বৈধভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। যদি কোনো পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সদস্যকে পক্ষপাতিত্বের কারণে মনোনীত করতে না পারে, তাহলে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্য কোনো ব্যক্তিকে মনোনীত করা যায়। গ্রাম আদালত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অন্য কোনো আদালতে পুনরায় বিচার করা যায় না। তবে এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে গ্রাম আদালত আইন সংশোধন করে ইউনিয়ন পরিষদকে ছোটখাটো মামলা নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেয়। এরই আলোকে ‘গ্রাম আদালত বিধিমালা, ২০১৬’ জারি করে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা