× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নতুন রূপে সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো ‘ঢাকা গেট’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০২ পিএম

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৩ পিএম

ঐতিহাসিক ঢাকা গেট। সংগৃহীত ছবি

ঐতিহাসিক ঢাকা গেট। সংগৃহীত ছবি

সংস্কারের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ঢাকা গেট। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরসংলগ্ন এলাকায় উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা। এর আগে পুরোনো আদলে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে ফটকটি।

জরাজীর্ণ এই স্থাপনা মানুষের মন থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঢাকা গেট সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সে সময় বলা হয়, সংস্কার করে এ স্থাপনাকে সপ্তদশ শতকের সেই রূপে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কথামতো ২০২৩ সালের ২৪ মে স্থাপনাটির সংস্কারকাজ শুরু করে ডিএসসিসি। প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচ করে গেটটি সংস্কারের কাজ করেছে ঠিকাদার কোম্পানি আহনাফ ট্রেডিংস।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা গেট নির্মাণ করেন মীর জুমলা। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলা ছিলেন বাংলার সুবাদার। বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার হতো এ তোরণ। সে সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনও ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নাম হয় ‘রমনা গেট’। রমনায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে সাধারণ মানুষের কাছে ফটকটি এ নাম পায়।

এ ফটকের পশ্চিম অংশটি পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ভবনের পাশে। এখন সেখানে মাথার ওপর মেট্রোরেল হওয়ায় গেট অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে। উত্তরে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন নেতার সমাধির প্রবেশপথের অংশ। দক্ষিণে পড়েছে দোয়েল চত্বর।

বুধবার গেটটির উদ্বোধন করেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও ফটকের নতুন নকশাকার স্থপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র তাপস বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী ফটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অবয়বের সঙ্গে সাথী হয়ে থাকবে। আমরা এটিকে সংরক্ষণ করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য আছে, যা আজ পরিস্ফুট হলো। প্রায় চারশ বছরের পুরোনো এই ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের সম্পদ, যা বিশ্বের অনেক উন্নত নগরীতেও পাওয়া যাবে না। তারা হয়তো সাগর ভরাট করে স্থাপনা বানাচ্ছে, কিন্তু শত বছর আগের ঐতিহ্য তাদের নাই। চারশ বছর আগের এই কামান আরও চারশ বছর পরও মানুষ দেখতে পারবে।’

ঢাকা গেটের পাশাপাশি লালকুঠি ও নর্থব্রুক হল সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ তাপস বলেন, ‘লালকুঠির জন্য এক একর জমি আমরা উদ্ধার করেছি। সংস্কারকাজ চলছে। দ্রুতই এগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

বিআইডাব্লিউটিএর পল্টুনের জন্য নদী থেকে শহর দেখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিআইডাব্লিটিএকে অনুরোধ করেছি ঘাটের পল্টুন সরিয়ে ফেলতে। সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাছিমের কাছেও আমার অনুরোধ অতিদ্রুত যেন পল্টুন সরিয়ে নদীর অববাহিকা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।’

এ ছাড়াও রুপলাল হাউসও সংস্কারের জন্যও প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান মেয়র। আগামী বছর আদি বুড়িগঙ্গায় নৌকাবাইচ আয়োজনের আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘ঢাকার মেয়রের জন্য কাজটি স্বাভাবিক হলেও নানা কারণে হয়নি। আমাদের বর্তমান মেয়র সেই স্বাভাবিক কাজটিই দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে করেছেন। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, এমন আরও যেসব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনা আছে সেগুলোও সংরক্ষণ করবেন।’

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে একই রকম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্য যদি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হয়, তাহলে শহরের প্রাণ থাকে না। আমরা কখনও কোনো মেয়রকে এ বিষয়ে রাজি করাতে পারিনি। তারা সকলেই নির্মাণের দিকে আগ্রহী ছিলেন। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে। কাজটি শেষ হলে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। মানুষ তা দেখতে যাবে। ঢাকা গেট দেখে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।’

স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ বলেন, ‘‘যেটা আগে ছিল, ওটাকেই আমরা রিস্টোরেশন (পুনরুজ্জীবন) করেছি। কিছু জিনিস ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফটকের ওপর কলসের মতো যে জিনিসগুলো, একটা কর্নারে বুরুজ ভাঙা ছিল, সেগুলো আমরা সংস্কার করেছি। তার মানে আদি যে ডিজাইনটা ছিল, সেটাকেই আবার নতুনভাবে করা হয়েছে। তবে সেখানে নতুন করে বসার স্থান এবং মীর জুমলার ‘বিবি মরিয়ম’ কামানটা সংযোজন করা হয়েছে।’’

উদ্বোধনের পরই ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দেখতে ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা