প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০৭ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৭ এএম
তীব্র শীতে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংগৃহীত ছবি
শীতের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে এক দিনে দুই রকম নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রথম দফায় ১৭ ডিগ্রির কম তাপমাত্রায় মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে বলে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আবার জানানো হয়, ১৭ নয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখা হবে। মাউশির এমন সিদ্ধান্তকে সমালোচনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন অভিভাবকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির ঘরে পৌঁছাবে। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এমন শীতের নজির নেই। কোমলমতি শিশুদের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকি প্রতিষ্ঠানের আরও সতর্কতা জরুরি। তালগোল পাকানো সিদ্ধান্ত জানিয়ে মাউশির কর্মকর্তরা নিজেদের যোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
মাউশি থেকে প্রথম নির্দেশনা আসে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে। মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী সই করা এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী) নেমে যাবে, সেসব জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা যাবে। বন্ধ ঘোষণার আগে মাউশির আঞ্চলিক উপপরিচালক সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর এ দিন সন্ধ্যায় স্কুল বন্ধ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানায় মাউশি। প্রায় একই সময়ে অনুরূপ সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় দফার আদেশে মাউশি বলে, যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাবে সেসব জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাউশির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। তাদের একজন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামার নজির নেই। অথচ মাউশি বলছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল বন্ধ করা যাবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে পৌঁছলে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা তো শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যাবে। আমার মনে হয়, মাউশি তালগোল পাকিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘মাউশি সম্ভবত সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছে, সে কারণেই এ বিপত্তি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কখনও রেকর্ড করা হয়েছে বলে তার জানা নেই। এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাসেও চলে যেতে পারে। সে রকম পরিস্থিতি আমাদের এখানে হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বুঝে বিভিন্ন জেলা ডিভিশনাল ডিরেক্টররা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন। মূলত সেই এলাকার শৈত্যপ্রবাহের ও শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’