প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২১ পিএম
শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। উষ্ণতার জন্য আগুন জ্বালিয়ে বসে আছেন অনেকে। শনিবার ভোরে মোংলায়। প্রবা ফটো
পৌষের শেষে এসে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এক দিন (আগামীকাল রবিবার) বাদেই পৌষের বিদায়। সোমবার থেকে মাঘ মাস শুরু। তার আগে বেড়েছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এই হিমেল হাওয়া শরীরে লেগে কেটে যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। কমে এসেছে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্যও। শুক্রবার হঠাৎ সারা দেশে গড়ে তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত শীতে রাত ও দিনের তাপমাত্রার মধ্যে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার্থক্য থাকে। কিন্তু শুক্র ও শনিবার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক কমে গেছে। দেশের কোনো কোনো জেলায় এই পার্থক্য সাড়ে ৩ থেকে ৩ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। শুধু কক্সবাজারের টেকনাফে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রির আশপাশে আছে। অন্যান্য জেলায় পার্থক্য রয়েছে সাড়ে ৭ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পার্থক্য যত কমবে, শীতের তীব্রতা তত বাড়বে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই মাসে শুক্রবারই প্রথম উত্তরের হিমেল বাতাস শুরু হয়েছে। এই হিমেল হাওয়ার শরীরে যেখানে লাগছে, সেখানে কেটে যাওয়ার মতো অনুভব হচ্ছে। আরও দুই দিন (সোমবার পর্যন্ত) এ অবস্থা বিরাজ করবে। তারপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। ১৮ বা ১৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা আবার বাড়বে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি, বগুড়ায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি। রংপুরে এই পার্থক্য কমে নেমে যায় ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি, দিনাজপুরের সৈয়দপুরে ছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি, নীলফামারীর রাজারহাটে ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি। ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নেত্রকোণায় ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি। চট্টগ্রামে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি, তবে বেশি ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুক্র ও শনিবারের তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা সবচেয়ে বেশি ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশালে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি। সবচেয়ে কম ছিল ফরিদপুরে ৩ ডিগ্রি, ঢাকায় ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি। রাজশাহীতে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি থাকলেও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পার্থক্য ছিল ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি। দিনাজপুরে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলেও রাজারহাটে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি। ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি থাকলেও নেত্রকোণায় ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি। শ্রীমঙ্গলে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি থাকলেও সিলেটে ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি। টেকনাফে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি থাকলেও চট্টগ্রামে ছিল ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি। যশোরে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি থাকলেও খুলনায় ছিল ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি। বরিশালে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি ও পটুয়াখালীতে ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ দুয়েকটি জেলা ও অঞ্চল বাদে প্রায় সব স্থানেই স্বাভাবিক পার্থক্য ছিল না।
হঠাৎ এত শীত কেন- জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গতকাল হঠাৎ করেই প্রায় সারা দেশে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি কমেছে। এই তাপমাত্রার সঙ্গে দেহের তাপমাত্রা মানিয়ে নিতে পারেনি। গত বছর ৩-৪ জানুয়ারিতে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এবারও গতকাল শুক্রবার এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে তা অব্যাহত আছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমলে শরীর মানিয়ে নিতে পারে। তবে হঠাৎ করে এমনভাবে কমে গেলে শরীরের জন্য মানিয়ে নেওয়া কঠিন। এখন দেশের প্রায় অনেক স্থানেই দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে।’
তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যখন কমে, তখন শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এখন ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ব্যবধান মাত্র ৫ ডিগ্রি। আর এ কারণেই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে এলে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।’
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি কোথাও কোথাও রবিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে সড়ক, অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ এবং বিমান চলাচলে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে, তবে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।