প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:২১ এএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৩৫ এএম
বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভোটের আগে নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও সুপ্রিম পার্টিকে নিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহলে নানা কৌতূহল। বিএনপি থেকে একটি অংশ নিয়ে গঠিত তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম নির্বাচন করবে বলে গুঞ্জন ছিল। জাতীয় পার্টিকে পেছনে পেলে তৃণমূল বিএনপি বা বিএনএম সংসদে বিরোধী হচ্ছে এমন খবরও রটেছিল। কিন্তু শেষমেশ কোনো গুঞ্জনই টেকেনি। প্রার্থী তালিকায়ও বড় কোনো চমক দেখাতে পারেনি তারা। দল তিনটি থেকে ভোটের মাঠে চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকা ২৭০ প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় মাত্র নয়জন। তাদের মধ্যে কেউই আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে।
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার হাতেগড়া তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পেয়েছিল ভোটের আগেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকা ১৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাঠে আলোচনায় ছিলেন মাত্র চার প্রার্থী। তাদের মধ্যে কেউই আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে।
এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান, বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করলেও আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন তিনি। আসনটিতে নাহিদ ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট পেয়েছে তৃতীয় অবস্থানে শমসের মবিন চৌধুরী।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন এই আসনের চতুর্থবার নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিরুদ্ধে। গাজীর এলাকায় শক্ত অবস্থান থাকায় তৈমুরর পাত্তাই পাননি। তিনি মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। বিপরীতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন গাজী। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়ছেন অন্তরা সেলিমা হুদা। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহামেদের কাছে ভরাডুবির মুখে পড়তে হয় তাকে। অন্তরা সেলিম হুদা পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৭ প্রার্থী। আর বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট।
মৌলভীবাজার-২ আসনে সাবেক বিএনপির এমপি এম এম শাহীনের একসময় ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান থাকলেও এবার নৌকার কাছে বিপুল ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। অবশ্য ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ভোট বর্জন করেছেন। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট। আর এম এম শাহীন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম বিভোর ছিল সংসদের বিরোধীদল হওয়ার স্বপ্নে। তারা বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে প্রার্থীদের বাগিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। শেষশেশ ৮৩ আসনে প্রার্থী দিলেও ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে আছেন ৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আলোচনায় ছিলেন চারজন।
বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর প্রার্থী হয়েছিলেন ফরিদপুর-১ আসনে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি জাফর। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের আরিফুর রহমান দোলন পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৯৮৯ ভোট। জাফর ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা এ এইচ এম গোলাম রেজা নোঙর প্রতীক নিয়ে লড়লেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আতাউল হক দোলনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেননি। আসনটিতে দোলন পেয়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার ৪৬ ভোট। বিপরীতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এইচ এম গোলাম রেজা পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৯৮৬।
নীলফামারী-১ আসনে নোঙ্গর এবার বিএনএমের প্রতীক নিয়ে লড়লেও পাত্তা পাননি জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। আসটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯০২ ভোট। আর জাফর ইকবাল সিদ্দিকী ১৩ হাজার ২২৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। পাবনা-২ আসনে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী নতুন নিবন্ধিত দল বিএনএমের হয়ে ভোটযুদ্ধে নামলেও আসতে পারেননি মূল লড়াইয়ে। অবশ্য বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন তিনি। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আহমেদ ফিরোজ কবির ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম ডলি শায়ন্তনি পেয়েছেন ৪৩৮২ ভোট।
ভোটের আগে নিবন্ধন পাওয়া আগের দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ১২১ আসনে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করলেও চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন ৮১ জন প্রার্থী। দলের সভাপতি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করলেও জয়ী হতে পারেননি। আসনটিতে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৮৭ ভোট। আর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৩৮ ভোট।