× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কূটনীতি

বিদেশি কূটনীতিকরা সরব থেকে নীরব

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:০৩ পিএম

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৭ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সরবতা থেকে শেষ পর্যন্ত নীরবতাকেই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের শুরু থেকে তাদের ব্যাপক সরব হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পক্ষকাল আগে থেকে নীরবতার পন্থা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। তাদের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে রয়েছে নানা মত। তবে সাধারণভাবে কম-বেশি সব বিশ্লেষকই মনে করছেন যে, কূটনীতিকদের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। কিন্তু সেটি না হওয়ায় তাদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এখন আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হবে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করতে পারে, এটাই এখন তাদের দেখার বিষয়। তাছাড়া অবস্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিরও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।

সংবিধান ও নির্বাচনী আইনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন কূটনীতিকরা

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কোনো দেশের নিজস্ব সংবিধান ও নির্বাচনী আইনকে প্রভাবিত করে এমন কিছু করতে পশ্চিমা দেশগুলো আর উৎসাহী নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাগুলো সাম্প্রতিককালে বরং নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণেই অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই তারা বিএনপির আন্দোলন থেকে তাদের দৃষ্টি আপাতত সরিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া বিএনপির আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পশ্চিমা বিশ্ব। এ বিষয়টি তারা আমলে নিয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির আন্দোলনে তেমন সংযুক্ত নয়। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসের বড় বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ঘটেছে।

অন্যদিকে শুরু থেকেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের বারবার অবহিত করা হয়েছে যে, সংবিধান অনুসারে সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে। কৌশলগত দিক বিবেচনায় সরকারের এই ভাষ্যকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকসহ সফরে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলকে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে তৎপর হতেও দেখা গেছে। এ সময় তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির সঙ্গে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারের মন্ত্রী ও আমলা এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন তারা। তবে বিএনপি নেতারা জানিয়ে দেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। বিএনপির নির্বাচনের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি বিদেশি কূটনীতিকদের সতর্ক করে তুলেছে। তারা এমন কোনো সক্রিয়তা আর দেখাতে চাননি, যাতে মনে হয় যে বিএনপির লাগাতার আন্দোলনের সঙ্গে তাদের নির্বাচনী তৎপরতার কোনো সম্পর্ক রয়েছে।

এ কারণেই নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের প্রকাশ্য তৎপরতা ততই কমে এসেছে। বড়দিনের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নির্বাচন-পূর্ববর্তী বা নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কোনো মন্তব্য করতে বা কোনো পদক্ষেপ নিতেও দেখা যাচ্ছে না। 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম দূরত্ব

উল্লেখ্য, নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তার শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো প্রায় অভিন্ন স্বরে কথা বলেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্ভবত তার এই একক সক্রিয় তৎপরতার বিপরীতে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের ‘ধীরে চলো’ নীতিই তাদের নীরব অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারত কারও পক্ষেই সুখকর হবে না’Ñ যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া ভারতের এমন বার্তা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি চীন এবং রাশিয়াও একাধিকবার স্পষ্ট করে এই বার্তা দেয় যে, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ তাদের এই বার্তাও বিভিন্ন বিদেশি মিশনকে মন্তব্য করা কিংবা অবস্থান নেওয়ার বদলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দিকে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে মিসরের নির্বাচন ও গাজা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু থেকেও বাংলাদেশ খানিকটা সরে এসেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রও আর সরব নেই আগের মতো। 

এমন প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কথাবার্তা এখন কমে গেছে। সন্ত্রাসীদের কোথাও জায়গা নেই। তারাও (বিদেশিরা) দেখেছে, সন্ত্রাসীদের প্রোমোট করলে তাদের বারোটা বাজবে। সুতরাং তারা চুপসে গেছে। তারা (বিদেশিরা) বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসো। এটাই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ।’

নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দৃশ্যত তৎপর ইসি

এদিকে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, দেশি-বিদেশি চাপ সামাল দিয়ে কঠোর অবস্থানে থেকে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে তারা সক্রিয় রয়েছে। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের অধিকাংশই নির্বাচনে অংশ নেওয়ায়, অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে বিএনপি কোনো আন্তর্জাতিক শক্তির অভিমতকে নিজেদের পক্ষে আনতে না পারায় বর্তমানে ইসি প্রতিষ্ঠানগতভাবে অনেকটাই ভারমুক্ত হয়ে উঠেছে। ইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন, ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা গেলে এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের গ্রহণযোগ্য উপস্থিতি ঘটলে কোনো দেশই এ নিয়ে আর কথা বলার সুযোগ পাবে না।

৩৫ দেশ থেকে আসছেন পর্যবেক্ষক

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) কয়েক সংস্থা ও দেশ প্রথমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার বিষয়ে নিশ্চয়তা না দিলেও উদ্ভূত নতুন প্রেক্ষাপটে অবস্থান বদল করেছে। এখন অন্তত ৩৫টি দেশ থেকেই আসছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। ইতোমধ্যেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) পাঁচ সদস্যের যৌথ প্রতিনিধিদল। কথা রয়েছে আরও দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক আসার। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অভ্যর্থনা জানাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা লাউঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে। আগতদের সহায়তার জন্য তথ্য প্যাকেজ এবং হোস্ট কর্মকর্তাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ জনগণ যদি ভোট দিতে আসে তাহলে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা এড়ানো যাবে। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে অন্তত ৩৫ শতাংশ ভোটার রয়েছে। এরা যদি ভোটকেন্দ্রে আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ অনেকটাই উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞ অভিমত 

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই কূটনীতিকরা উপলব্ধি করেছেন নির্বাচনকে থামানোর উপায় নেই। এমন প্রচেষ্টা অর্থবহও নয়। তাদের নজরটা হয়তো জনগণের ওপর ছিল। তারা হয়তো দেখতে চেয়েছিলেন বিরোধী দল যেভাবে বলছে, সেভাবে জনগণ ভোট প্রতিহত করতে রাজপথে নামে কি না। কিন্তু তারা দেখেছেন, জনগণের মধ্যে এ ধরনের প্রস্তুতি ও আগ্রহ নেই, অন্যদিকে ২৮ অক্টোবর থেকে সংঘর্ষ ও সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে। এসব ঘটনা তাদের উপলব্ধি করিয়েছে যে, এসবের মধ্যে তাদের থাকা ঠিক হবে না। বিদেশি কূটনীতিকরা বরং দেখতে চাইছেন যে, নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ কতখানি শান্তিপূর্ণ হবে এবং নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা কতখানি আছে। 

নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিক থেকে আন্তর্জাতিক কোনো চ্যালেঞ্জ আসার শঙ্কা নেই জানিয়ে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে বহির্বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, নতুন অনেক দেশও যুক্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিমের বা ইউরোপীয় কোনো দেশও চাইবে না পররাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে ব্যাহত করতে কিংবা পিছিয়ে পড়তে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা