× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফিরে দেখা ২০২৩

কূটনীতিতেও আলোচনায় নির্বাচন ও নিষেধাজ্ঞা

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৫ পিএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৭ পিএম

কূটনীতিতেও আলোচনায় নির্বাচন ও নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে কূটনৈতিক পাড়া। বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীতে বেড়ে যায় একাধিক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক ও জাঁদরেল কর্মকর্তাদের আনাগোনা। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর পাশাপাশি তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সংসদ নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বছরের মাঝামাঝি সময়ে কূটনৈতিক আলোচনায় প্রাধান্য পেতে থাকে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ইস্যু। উজরা জেয়া, ডোনাল্ড লু’র মতো মার্কিন প্রভাবশালী মন্ত্রী, সেক্রেটারি ও আন্ডার সেক্রেটারির ধারাবাহিক ঢাকা সফরে আলোচনা আলাদা মাত্রা পায়। 

গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এরপর আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ের ফেলিপ গঞ্জালেজ। এর আগে ৯ জানুয়ারি ঢাকায় স্বল্প সময়ের জন্য আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গ্যাং। আফ্রিকা যাওয়ার নিয়মিত রুট না হওয়ার পরও তিনি ঢাকায় ৫২ মিনিটের জন্য যাত্রাবিরতি দেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকও করেন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় বাংলাদেশে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঝটিকা সফর নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলে নানা গুঞ্জন। পরের মাসেই ঢাকা সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বাংলাদেশ সফর করেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী বছরে ঢাকা হয়ে ওঠে কূটনীতির বড় হাব। বিশেষ করে বে-অব বেঙ্গল, ইন্দো-প্যাসিফিকে নিজেদের ক্ষমতা জোরদারে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের নানা তৎপরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। 

নির্বাচনের এই বছর অবশ্য শুরুই হয় নানা কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। গত বছরের শেষ মাসেও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পূর্বাপর এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এই চ্যালেঞ্জে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের প্রকাশ্য মন্তব্য ও তৎপরতা সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। তাই এ বছর বন্ধুত্ব স্থাপনে ও তা বজায় রাখার কূটনীতিতে ব্যাপক জোর দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। 

পাশাপাশি নির্বাচনী বছরে কোনো দেশের সঙ্গে যাতে সম্পর্কের অবনতি না ঘটে, সে বিষয়েও কাজ করে সরকার। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নানা উদ্যোগ নেয়। দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে সেসব দেশে কর্মরত মিশনপ্রধানদের নিয়ে ইতালিতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সরকার বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত, বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান, বন্ধুরাষ্ট্র চীন ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহায়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রাখতে এবং ক্ষেত্রবিশেষ ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গুরুত্ব দেয়। যার সুফলও মিলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচার চালায়। বছরজুড়েই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছিলেন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। এসব তৎপরতার মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে দেখা যায় রাজপথের আন্দোলনে তৎপর হয়ে উঠতে। তবে পিটার হাসের তৎপরতা খুব বেশি দিন অব্যাহত থাকেনি। অন্যদিকে রাজপথের সহিংস জ্বালাও-পোড়াও তৎপরতা বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কেও কূটনীতিকদের নিস্পৃহ করে তুলতে থাকে।

গত বছরের জুলাইয়ে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার ঢাকা সফর ও ডোনাল্ড লুর দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফর এখানকার রাজনীতি ও কূটনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উজরা জেয়ার বৈঠকের পর তার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের প্রত্যাশা-সংবলিত টুইট ও বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

বিদায়ি বছরে বিএনপির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর, বিশেষ করে ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ডেনমার্ক, স্পেন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ও উপ-রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক এবং জাতিসংঘ, ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিবৃতি দেশব্যাপী যেমন আলোচিত হয়েছে, তেমনি সরকারকেও বিব্রত করেছে। জুলাই মাসে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয় জাতিসংঘের আবাসিক অফিসসহ ১৩ দেশের ঢাকা মিশন। এ ঘটনায় দেশগুলোর মিশনপ্রধানকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আনুষ্ঠানিকভাবে অসন্তোষ জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির বিবৃতি নিয়েও অসন্তোষ জানায় বাংলাদেশ সরকার। 

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই বাংলাদেশে বাড়তে থাকে পশ্চিমা দেশগুলোর নানামুখী চাপ। গত অক্টোবরে বড় চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের কারণে তাদের ওপর এই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হতে পারে। বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যক্তির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এই ভিসানীতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সৃষ্টি করে বড় ধরনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন। বলা চলে, বিদায়ি বছরে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য এটিই ছিল বড় ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো এক বার্তায় নয়াদিল্লি জানায়, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষেই সুখকর হবে না।’ এই বার্তার কথা ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং তা কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ভিসানীতির মধ্যে দিয়ে সৃষ্ট চাপ বর্তমান সরকার দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। 

বিদায়ি বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ও জি-২০ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা পায় ঢাকা। গত সেপ্টেম্বরে জি-২০ বৈঠকের ফাঁকে নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর ভারতের আস্থার বিষয়টি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। এ ছাড়া এই সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদাভাবে সেলফি তোলেন। এ বিষয়টিও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

আগস্টে জি-২০ সম্মেলনের পরপরই বাংলাদেশে সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তার এ সফর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ফ্রান্স সরকারের স্যাটেলাইট, অস্ত্র, উড়োজাহাজ ক্রয় এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়। এ ঘটনাটির মধ্য দিয়েও বর্তমান সরকারের প্রতি বহির্বিশ্বের আস্থা ও ভরসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

নিঃসংশয়ে বলা চলে, গত বছর ভৌগোলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ আলোচিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার হটস্পট ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সফর। দুই দিনের সফরে এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পরাশক্তিগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি দেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এ অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য বন্ধ করতে একসঙ্গে কাজ করব।’ 

মূলত সের্গেই ল্যাভরভের সফরের পর থেকে বাংলাদেশে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও সর্বাত্মক ও জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্র। কমতে শুরু করে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপ ও চাপ। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেও যান। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা