× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আশা তবু জাগবেই নতুন করে

ইমতিয়ার শামীম

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:০৫ এএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১২ পিএম

আশা তবু জাগবেই নতুন করে

স্বাগত নতুন বছর, স্বাগত ২০২৪ সাল। শুভেচ্ছা সবাইকে।

অনেক আগে কোথাও এ রকম পড়েছিলাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে, কোনো এক সকালে, শিল্পী-কবি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় হঠাৎ পথে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন; বিস্ময় আর বিপন্নতা নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলেন, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে উদ্দেশ্যহীন চোখজোড়া সম্বল করে সারি সারি মানুষ হেঁটে আসছে। তাদের সামনে শুয়ে আছে অন্তহীন সুদীর্ঘ পথ। তবু তারা হাঁটছে তো হাঁটছেই। কিছুতেই এই দৃশ্য চোখ থেকে নামিয়ে রাখতে পারেননি, মুছে ফেলতে পারেননি জটিলেশ্বর। বাড়ি ফিরে লিখেছিলেন তাঁর অমর সেই রাগসংগীত, ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার/ও কি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা!/ও কি পাখির কূজন, নাকি হাহাকার।’

এখন, স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫২ বছর পেরুনো আজকের এই নতুন বছরের নতুন সকালে বলা যাবে না, এ সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার। কিন্তু ইস্পাতদৃঢ় কণ্ঠে এও কি বলা সম্ভব, সুদূর সেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাতি দ্বীপে নতুন বছরে প্রথম যে সূর্য ফুটে উঠল, তার দ্যুতি আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে আনন্দের ঝরনাধারা? বলা কি সম্ভব, স্বপ্নের চিতা জ্বলছে না সেখানে? গত বছরটি আমাদের শুরু হয়েছিল বলতে গেলে গতানুগতিকভাবে; কিন্তু শেষ হয়েছেÑ অস্বীকার করার জো নেই, আমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক জটিল সমীকরণের মধ্যে রেখে। অগ্নিসন্ত্রাসের মহড়ার মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ জাগানোর চেষ্টা চলেছে বছরের শেষ দিকে। কিন্তু পুরো দেশ যেন হয়ে আছে নিঃস্তরঙ্গ, শান্ত একটি নদী; অথচ যার তলদেশে ঘুরপাক খাচ্ছে সংকট আর সংকট। যেকোনো মুহূর্তে সেই সংকটের নানা স্রোতধারা ঘূর্ণি তুলতে পারে জলের উপরিতলে। 

তাহলে নতুন এই বছর কী বার্তা নিয়ে আসছে আমাদের জন্য? আমরাই-বা কোন মণিমানিক্য খুঁজছি তার মধ্যে? পেছনের দিকে তাকিয়ে বোধ করি বলা চলে, নতুন এই বছরটিতে মূলত অব্যাহত থাকবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আগের বছরেরই বিবিধ ঘটনাক্রম। এর আগে অন্য কোনো নতুন বছরকে কি আগের বর্ষের ধারাবাহিকতার এত জের টানতে হয়েছে? মনে পড়ে না। সরকারি কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়েছে একাধিক বড় প্রকল্পÑ যার সবই আবার একেবারে পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়েছে, এ রকম বলা যায় না। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলেছে। কিন্তু এই সেতু দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কি.মি. রেলপথ নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। চালু হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। ঢাকা থেকে ট্রেন যাচ্ছে এখন সরাসরি কক্সবাজারে। কক্সবাজার হয়ে এই রেলপথ যাবে মিয়ানমার সীমান্তবর্তীর ঘুমধুমের দিকে। চালু হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ। এমন আরও অনেক উদাহরণ টেনে জোরেশোরেই বলা যাবে, উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যদিও এসবের নেতিবাচক দিক আছে কি না, থাকলে কতটুকু, তা নিয়ে মুক্ত ও ব্যাপক আলোচনা নেই বললেই চলে। 

বছরের শেষ দিকে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প সম্পর্কে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে মন্তব্য করতে দেখা গেছে, ‘বিআরটি প্রকল্প গাজীপুরকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে।’ অনেক পরিকল্পনাবিদ ও অর্থনীতিবিদও এ রকমই মনে করেন। তাদের মতে, এ প্রকল্পের নেতিবাচক জের এ দেশকে টানতে হবে বছরের পর বছর। একইভাবে হয়তো নতুন বছরেও আমাদের টানতে হবে আগের বছরের রাজনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক নির্যাতন ও দমন-পীড়ন, ব্যাংকিং সেক্টরের ধস, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের দাপট, বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর থাবা বসানোর অপচেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি। 

অবশ্য নতুন এ বছর আমাদের জন্য কতটুকু স্বস্তিকর হয়ে উঠবে, সেটা টের পাওয়া যাবে বছরের প্রথম মাসেই। আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার ও নির্বাচনকে ঘিরে গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির আবর্তনে জনগণকে হাবুডুবু খেতে হয়েছে। ব্যক্তির রাজনৈতিক অধিকার তো বটেই, এমনকি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও গত বছর মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে এবং সরকারি হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও এখন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এ রকমই বলে থাকেন। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রণয়নের। যাতে জবাবদিহির আওতায় আনা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে। কিন্তু এমন আইনের কারণে ব্যক্তিগত তথ্য আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে কি না, খোদ সরকারেরই হস্তগত হবে কি নাÑতা নিয়েও দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। এই উৎকণ্ঠা আমাদের এ বছরও বয়ে বেড়াতে হবে। গত বছর এক রাজনীতিবিদকে বলতে শোনা গেছে, ‘খেলা হবে’। তা খেলাই হচ্ছে বটে। জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছেÑ তাদের জীবন দিতে হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসে, তাদের শিকার হতে হচ্ছে রাজনৈতিক নিপীড়নের, তাদের পুড়তে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির আগুনে। ২০২৩ সালের শেষদিনটিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০০-এর মতো, তাতে মারা গেছে ৪২ জন। এসব ঘটনায় আহত আর গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৪ হাজার ৭৭১ জন। আর নির্বাচনী সহিংসতার ১৩৮টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ জন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৫টি। মৃত্যু হয়েছে পুলিশ হেফাজতে ১৭ আর কারা হেফাজতে ১৬০ জনের। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৮৯টি অপহরণে যুক্ত। সীমান্তে বিএসএফ কেড়ে নিয়েছে ২৭ জনের প্রাণ, আহত হয়েছে ৩২ জন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘাতের পর থেকে গত দুই মাসে সারা দেশে আগুন জ্বলেছে ২৮৫টি যানবাহনেÑ যার মধ্যে ১৮০টি বাস। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা ঘটছে; কিন্তু তার জের ধরে গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা ইত্যাদি যেসব সরকারি কর্মকাণ্ড চলছে তাকেও একধরনের ‘সহিংসতা’ই বলা চলে। আন্দোলনে বিএনপি ‘সুবিধা’ করতে পারছে না; কিন্তু এও এক বড় প্রশ্ন, কেন জনগণ তাদের আন্দোলনে একাত্ম হতে পারছে না। কেন ইতিহাসের পাতায় দেখা দিতে চলেছে এমন এক অসহযোগ আন্দোলনÑ যাতে সংক্ষুব্ধ ও বিক্ষুব্ধ থাকার পরও জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। কেবল বিএনপি নয়, বিরোধী যেকোনো রাজনৈতিক দলই কি তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্যের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী? তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কি পূর্বের নেতাকর্মীদের মতো স্থির রাজনৈতিক বিবেচনা বোধ, একনিষ্ঠতা ও নিঃস্বার্থপরতা আছে? দেশের গত বছরের রাজনৈতিক হালচাল এসব প্রশ্নকে বড় বেশি সরব করে তুলেছে। সন্দেহ নেই, চলতি বছরেও করবে। এটি সুস্পষ্ট, চলতি বছরের সংসদীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। কিন্তু সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে যেভাবে ‘ডামি প্রার্থী’ কিংবা ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ দিয়ে ‘প্রীতি নির্বাচন’ করার আয়োজন হয়েছে, তাও প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতা ঘটতে শুরু করেছে। প্রার্থীদের হলফনামার সূত্রে জনগণ দেখতে পাচ্ছে, জনপ্রতিনিধি হওয়াই এখন বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার ‘ঝুঁকিমুক্ত’ পথ। এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রার্থী মিলছে না, অতীতে নির্বাচিত হওয়ার পর যার সম্পদ কমেছে!

বছর শেষে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন রাইট টু ফ্রিডমের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাইডেন প্রশাসন ও কংগ্রেসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সব সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর যেমন, চলতি বছরেও তাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলোÑ ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা থেকে দূরদর্শিতার সঙ্গে সুবিধাজনক কূটনৈতিক দূরত্বে অবস্থান করা। যদিও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের কারণেই সেই পরিসর সংকুচিত হয়ে আসছে। কেননা রাজনৈতিকভাবে বঞ্চনাবোধের শিকার রাজনৈতিক দল এবং বুদ্ধিজীবীচক্র যে আচরণ করছেন, তা থেকে সুস্পষ্ট যে তারা চাইছেন, বৈদেশিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে হলেও ক্ষমতাকাঠামোয় পরিবর্তন আসুক। নিজেদের রাজনৈতিক দৈন্য ঢাকতে কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী যেভাবে বাইডেন প্রশাসনের কাছে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক অবরোধ প্রত্যাশা করছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলছেনÑ তা নতুন বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নিঃসন্দেহে সংকটাপন্ন করে তুলেছে।

এ অবস্থায় নতুন বছরে মানুষ আশা খুঁজবে কোথায়? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাকে বিপন্ন করেছে গত বছর। অর্থনৈতিক বিরূপতা সামাল দিতে সরকারকে আবারও মুখ ফেরাতে হয়েছে আইএমএফের দিকে। কঠিন শর্তে নিতে হয়েছে ঋণ। এখন শুরু হয়ে গেছে একদিকে আইএমএফের খবরদারি আর অন্যদিকে রাজপথের রাজনৈতিক দলের খোলা উল্লাস। করোনার ধাক্কা সামলাতে পারলেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সংকট যে কত প্রকট, তা বোঝা গেছে ডেঙ্গুর ধাক্কায়। শহর থেকে গ্রামÑ সবখানে ডেঙ্গু উপস্থিত হয়েছিল মূর্তিমান এক আতঙ্ক হয়ে। সরকার একে ‘মহামারি’ বলেনি বটে; কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঘটনাটিকে সে রকমই আখ্যা দিয়েছেন। সবচেয়ে বিপন্ন ছিলেন আমাদের শ্রমিকরা। পোশাক খাতে মজুরি ইস্যু নিয়ে গড়ে ওঠা শ্রমিকদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছে পরাজয়, হতাশা আর বিপন্নতা নিয়ে। মেনে নিতে হয়েছে মালিক পক্ষ আর সরকারের বেঁধে দেওয়া মজুরি কাঠামোই। এক পরিসংখ্যান বলছে, কর্মক্ষেত্র নিরাপদ নয় বলে গত বছর কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারাতে হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ শ্রমিককে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৫০২ শ্রমিক। ২০২২ সালে এভাবে মারা গিয়েছিলেন ৯৬৭ শ্রমিক, আহত হয়েছিলেন ২২৮ জন। পুরান ঢাকার ক্যাফে কুইন ভবন, বঙ্গবাজার আর নিউ সুপারমার্কেটের আগুন শুধু ব্যবসায়ীদেরই নিঃস্ব করেনি, শ্রমিকদেরও দিশেহারা ও কর্মহীন করে রেখে গেছে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। কিন্তু এই অগ্রগমনের পথ যে মসৃণ নয়, করোনার বছর থেকে তা আমরা আবারও হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি। বলা হয়, রাজনীতি হলো অর্থনীতিরই ঘনীভূত রূপ। তাই রাজনৈতিক যে সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে, তার সত্যিকার চেহারা খুঁজে পেতে তাকাতে হবে অর্থনীতিরই দিকে। গত বছর অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তার সব দায় কি চাপানো যাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ওপর? বিশেষত গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে বিশ্ব পরাশক্তির রাজনৈতিক নতুন আবর্তনই যখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। গত বছরের শেষদিন আমাদের হাতে এসেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতিসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ। সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘সরকার মনে করছে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই যথেষ্ট। মানবাধিকারের কথা তুললে সরকার বিরক্ত হচ্ছে।’ বোধকরি, গত বছরের গূঢ় চিত্র লুকিয়ে আছে এই দুটি বাক্যের মধ্যেই।

জানুয়ারির এই নতুন সূর্যালোকে যে প্রান্তর চোখে পড়ছে, তা আসলে কোনো আশা জাগায় না। কিন্তু মানুষ তবু তো আশা নিয়েই পা ফেলে; আমরাও ফেলছি। যদি বলি ব্যক্তি মানুষের সংগ্রামের কথাÑ এই দেশে, এই কালে তার যে চালচিত্র, তা সত্যিই বিস্ময়কর, আশা জাগানিয়া। তার অন্তর্গত প্রাণশক্তিও দুর্দমনীয়। একবার মনে করি, নেত্রকোণার হৃদয় সরকারের কথা। মনে করি, তার মা সীমা সরকারের কথা। জন্মের পরপরই জানা গিয়েছিল, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হৃদয়। কোনোদিন হাঁটতে পারবে না। সোজা হয়ে বসতে পারবে না। সীমা সরকার তার পরও অসীম এক ইচ্ছা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই দুই হাজার সাল থেকে। কোলে করে হৃদয়কে স্কুলে নিয়ে গেছেন, নিয়ে গেছেন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত বছরের শেষ সুসংবাদ বোধকরি এই, সেই হৃদয় স্নাতক সম্পন্ন করার উদ্দেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে থিসিস পেপার জমা দিয়েছেন। ব্যক্তি মানুষের এই সংগ্রামকে সমাজ-সমষ্টির সংগ্রামে পরিণত করতে হবে, রাজনীতির সংগ্রামে পরিণত করতে হবে; ব্যক্তি মানুষের এই প্রাণশক্তিকে সমাজ-সমষ্টির প্রাণশক্তি করে তুলতে হবে, রাজনীতির প্রাণশক্তি করে তুলতে হবে।

আমাদের কোনো আশাই তখন আর দুরাশা বলে মনে হবে না। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা এটুকুই।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা