অনিরাপদ কর্মক্ষেত্র
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০০ পিএম
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২৪ পিএম
প্রবা ফটো
চলতি বছরে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে।এ সময়ে আহত হয়েছে আরও ৫০২ জন শ্রমিক। গত বছর শ্রমিক নিহতের সংখ্যা ছিল ৯৬৭ এবং আহত ২২৮ জন। গত বছরের তুলনায় শ্রমিক নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়েছে। নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬৫ জন আর আহতের সংখ্যা বেড়েছে ২৭৪ জন। সবচেয়ে বেশি ৬৩৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেইটি, হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকি রিজওয়ানা, রিসার্চ অ্যান্ড মনিটরিং অফিসার নুর আলম, কেস ম্যানেজম্যান্ট অফিসার নুসরাত জাহান।
১৫টি সংবাদপত্র ও ওশির উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এসএম মোর্শেদ।
তিনি বলেন, এ বছর কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ জন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১০৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫ জন।
এছাড়া সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, পরিবহনখাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে ও আহত হয়েছে ১২৭ জন, ২২০ জন দিনমজুর নিহত হয়েছে ও আহত হয়েছে ৭৬, নির্মাণখাতে নিহত ১৪৯ এবং আহত ৭২ জন, কৃষিশ্রমিকের নিহতের সংখ্যা ১৪৬ ও আহত হয়েছে ১০ জন (যাদের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছে ৭১ জন), পোশাকশিল্পে নিহত ৬৪ ও আহত ৮৯ জন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নিহত ৯৪ ও আহত ১৫ জন, মৎস্যখাতে নিহত ৫৩ ও আহত ২২ জন, সেবাখাতে নিহত ২৬ ও আহত ২২ জন, সিরামিকখাতে নিহত ১৭ ও আহত ৯ জন, চামড়াশিল্পে নিহত ৪ ও আহত ১৭ জন, ইটভাটা/ব্রিকফিল্ড নিহত ১১ ও আহত ৬ জন, জাহাজভাঙা/শিপব্রেকিং এ নিহত ৭ ও আহত ২৯ জন, চা শ্রমিক নিহত ১ ও আহত ৬ জন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিহত ৩ ও আহত ২ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহন খাতে নিহত হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক। ২০২৩ সালে এ খাতে নিহত ৬৩৭ ও আহত ১২৭ জন অথচ ২০২২ সালে ছিল নিহত ১০৫ ও আহত ২৯ জন।
প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।
এসময় তারা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নয়নে সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা, পোশাক খাতের মত অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করে তোলা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন দশ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা,
এছাড়া আহত শ্রমিকরে পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা, শিল্প খাতের সব সেক্টরে ই আই এস চালু করা, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেইজ তৈরি করা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত/আহত শ্রমিকদের সার্বজনীন পেনশন স্কীমে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ হতে প্রদান করা, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা, কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।