প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:০৬ পিএম
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২২ পিএম
ফাইল ফটো
গত ছয় বছরে (২০১৬-২২) বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে পরিবারপ্রতি গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। আর মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। তবে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৫.৬ শতাংশ। পল্লী অঞ্চলে কমেছে ৫.৯ শতাংশ আর শহরাঞ্চলে ৪.২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ১৭তম হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্পটির পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে এ বিষয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন উপমহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু, মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এইচআইইএস ২০২০-২১ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ ও প্রশ্নত্তোর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দিপংকর রায়।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পল্লী ও শহরাঞ্চলের ৭ হাজার ২০০ করে পরিবার অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারের ১২ মাসের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। জরিপের মাধ্যমে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফাংশনাল ডিফিকাল্টি, লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান, শ্রমশক্তির হার, অভিবাসন, রেমিট্যান্স ইত্যাদি বিষয়েও তথ্য সরবরাহ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। পরিবারের সদস্যসংখ্যা ধরা হয়েছে ৪.২৬ জন। সে হিসাবে মাথাপিছু ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ২০১৬ সালে প্রতি পরিবারে ছিল ৩৭ হাজার ২৪৩ টাকা ও মাথাপিছু ছিল ৯ হাজার ১৭৩ টাকা। ৬ বছরে পরিবারপ্রতি ঋণ বেড়েছে ১১১.১০ ভাগ।
আবার ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ জাতীয় পরিবারের ঋণের প্রায় আড়াই গুণ বেশি। সে হিসাবে ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ টাকা। এসব পরিবারের মানুষের গড়ে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯৬৯ টাকা। গ্রামের চেয়ে শহরের পরিবারগুলোর ঋণ প্রায় ২১০ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে গ্রামের প্রতি পরিবারে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪১১ টাকা, শহরে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ টাকা। অর্থাৎ গ্রামের তুলনায় তিনগুণের বেশি।
কমেছে দারিদ্র্য
বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ ভাগ, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪.৩ ভাগ। জাতীয়ভাবে দারিদ্র্য কমেছে ৫.৬ ভাগ। বর্তমানে পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ ভাগ ও শহরাঞ্চলে ১৪.৭ ভাগ, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৬.৪ ভাগ ও ১৮.৯ ভাগ। অর্থাৎ পল্লী অঞ্চলে কমেছে ৫.৯ ভাগ ও শহরাঞ্চলে ৪.২ ভাগ। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে বলে দাবি করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল জাতীয়ভাবে ১২.৯ ভাগ, সেটি কমে হয়েছে ৫.৬ ভাগ। পল্লীতে ছিল ১৪.৯ ভাগ ও শহরে ৭.৬ ভাগ, বর্তমানে হয়েছে ৬.৫ ভাগ ও ৩.৮ ভাগ। বিভাগভিত্তিক দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি বরিশালে। বর্তমানে সেখানে উচ্চ দারিদ্র্য হার ২৬.৯ ভাগ ও নিম্ন দারিদ্র্য হার ১১.৮ ভাগ।
আয়-ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০২২ সালে একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা হয়েছে; যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। আয় বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি পরিবারের গড় মাসিক ব্যয় হচ্ছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা; যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।
মাছ-মাংসের চেয়ে ফলের চাহিদা বেশি
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে মানুষের ক্যালোরি গ্রহণের হার বেড়েছে। তারা মাছ, মাংস ও দুধ খাওয়া কমিয়ে ফল খাওয়া বাড়িয়েছে। ফল খাওয়ার হার বেড়ে হয়েছে ৯৫.৪ ভাগ, যা ছিল ৩৫.৮ ভাগ। মাছ খাওয়ার হার বেড়ে হয়েছে ৬৭.৮ ভাগ, যা ২০১৬ সালে ছিল ৬২.৬ ভাগ। দুধ পানের হার ৩৪.১ ভাগ, যা আগে ছিল ২৭.৩ ভাগ। গরু ও মহিষের মাংস খাওয়ার হার ১১.৭ ভাগ, যা আগে ছিল ৭.৫ ভাগ। মুরগি ও হাঁসের মাংস খাওয়ার হার ২৬.২ ভাগ, যা আগে ছিল ১৭.৩ ভাগ।
অপরদিকে ২০২২ সালে চালের দৈনিক মাথাপিছু গড় ভোগের পরিমাণ ৩২৮.৯ গ্রাম, যা ২০১৬ সালে ছিল ৩৬৭.২ গ্রাম। ২০২২ সালে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ৭২.৫ গ্রাম হয়েছে, যা ছিল ৬৩.৮ গ্রাম। এ সময়ের মধ্যে মানুষের খাদ্যের চেয়ে অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। খাদ্যব্যয়ের শতকরা হার হচ্ছে ৪৫.৮ ভাগ এবং খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হচ্ছে ৫৪.২ ভাগ, যা ২০১৬ সালে ছিল ৪৭.৭ ভাগ ও ৫২.৩ ভাগ। ২১.১১ শতাংশ মানুষ মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ২০২২ সালে। পল্লীতে এ হার ছিল ২২.৩৬ ভাগ ও শহরাঞ্চলে ১৮.৩৭ ভাগ।
প্রতিবেদনের অন্যান্য দিক
বর্তমানে জাতীয়ভাবে ৯৯.৩৪ ভাগ পরিবার বিদ্যুৎ পাচ্ছে, যা ২০১৬ সালে ছিল ৭৫.৯২ ভাগ। বর্তমানে পল্লী অঞ্চলে এ হার ৯৯.১৪ ভাগ ও শহরাঞ্চলে ৯৯.৭৮ ভাগ। প্রতি পরিবারে উন্নত টয়লেট ব্যবহারের হার ৯২.৩ ভাগ, পানযোগ্য জলের সুবিধা ৯৬.১ ভাগ এবং স্বাক্ষরতার হার ৭৪.০ ভাগ।