× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরকার

নাগরিক সেবায় মন্থরগতি

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম

নাগরিক সেবায় মন্থরগতি

একটি কার্যকর, দক্ষ ও গতিশীল প্রশাসনিক পদ্ধতির আওতায় সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদনে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। দেশের নাগরিকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) সার্বিক মূল্যায়নে ৫১টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এখনও অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পিছিয়ে রয়েছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। আবার চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ করতে পারেনি। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ করতে এপিএ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। 

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সংশোধন করে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২০১০, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫, বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদপ্তর বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। আগামী সরকার গঠনের পরে যাতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে সে কারণে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সংশোধন করা হয়েছে। নতুন এ সংশোধন নীতিমালায় মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবেÑ সেই বিধান এবার যুক্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সংশোধন করে নতুন নির্দেশিকা ২০২৩-২০২৪ প্রকাশ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে অনেক মন্ত্রণালয় ভুল তথ্য দিয়ে আসছে। দেখাচ্ছে, সরকারি কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে, আসলে পরিদর্শনে গেলে তার অর্জন খুঁজে পাওয়া যায় না। জানা গেছে, সরকারি কর্মকাণ্ডে দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, গতিশীলতা আনয়ন, সেবার মানোন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২০১৪-১৫ সাল থেকে মন্ত্রণালয়/বিভাগ পর্যায়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বা এপিএ প্রবর্তন করা হয়। একটি সরকারি অফিস তার কার্যতালিকা, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশলকে বিবেচনায় রেখে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর চালু করা হয়েছে। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে এপিএ চুক্তি বাস্তবায়নে বড় সাফল্য অর্জন করেছে মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। এ ছাড়া গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫১টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রথম সাফল্য অর্জন করেছে। তার আগের বছরও সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। এর পর থেকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) সার্বিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ভুল প্রতিবেদন দিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানতে পেরেছে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অনেক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিতে বর্ণিত কার্যক্রম সম্পাদনের বিষয়টি উক্ত অফিস এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন অফিস অর্থবছরজুড়ে পরিবীক্ষণ করে এবং অর্থবছর শেষে এপিএ স্বাক্ষরকারী অফিসের অর্জন মূল্যায়ন করা হয়। অর্জিত ফলাফল পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন অফিস আওতাধীন অফিসের সামগ্রিক ‘পারফরম্যান্স’ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনার এ পদ্ধতিটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দপ্তর-সংস্থা পর্যায়ে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এবং গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের অফিসসহ প্রায় ২৬ হাজার অফিস এপিএ বাস্তবায়নে কাজ করে। এর পরে এপিএ-তে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা, মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ও টেকসই উন্নয়ন ২০৩০-সহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের অন্যান্য নীতি/পরিকল্পনায় বর্ণিত কার্যক্রমের আলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি, এপিএতে সুশাসন সংশ্লিষ্ট পাঁচটি কর্মপরিকল্পনা, যেমন শুদ্ধাচার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, তথ্য অধিকার, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকায় তা সরকারি অফিসের কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়ায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিধান রাখা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপিএ প্রণয়নে উদ্ভাবনমুখী ও সংস্কারমূলক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। চলমান কাজের পাশাপাশি এপিএতে গুরুত্বপূর্ণ নতুন কাজের অন্তর্ভুক্তি, নাগরিকসেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্যে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং সকল সরকারি অফিসের শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এ নির্দেশিকায় গুরুত্ব প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এপিএ টিমের কলেবর বৃদ্ধি করে এটিকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন অফিস কর্তৃক আওতাধীন অফিসের এপিএর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সম্পাদিত কার্যক্রমের গুণগত মান বিবেচনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং নম্বরভিত্তিক মূল্যায়নের পরিবর্তে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এপিএর প্রতিটি কার্যক্রম ও কর্মসম্পাদন সূচক যথাসম্ভব ফলাফলধর্মী হতে হবে এবং কোনো-না-কোনো নীতি/পরিকল্পনার আলোকে গ্রহণ করতে হবে। এতে চ্যালেঞ্জিং, উদ্ভাবনমুখী, নাগরিক সেবা ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিটি কার্যক্রম/সূচকের গুণগত মান বিবেচনায় চূড়ান্ত মূল্যায়নে নম্বর প্রদান করা হবে। মাঠ পর্যায়ের অফিসের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) শূন্যপদ পূরণে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের এপিএতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা/নীতি/কৌশলে বর্ণিত কার্যক্রমগুলো উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিফলন প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের এপিএতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কার্যক্রম নির্ধারণে বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা যথাসম্ভব বজায় রাখতে হবে। যেসব মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতায় কোনো দপ্তর/সংস্থা নেই, সেসব মন্ত্রণালয়/বিভাগ তাদের স্ব স্ব অংশীজনদের প্রদত্ত সেবার মান উন্নয়নসংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অর্থবছর শুরুর পূর্বেই ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা’ প্রকাশ করবে।

এ ছাড়া সেবাধর্মী কার্যক্রমে সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি বা সিটিজেনস চার্টারে প্রদত্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করতে হবে। এসব কাজের গুণগত মানের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যালোচনা এবং সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়নসংক্রান্ত জাতীয় ও কারিগরি কমিটির পর্যালোচনায় মাঠ প্রশাসন থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। কোনো সূচকের অর্জনের সপক্ষে প্রমাণক দাখিল করা না হলে সূচকটিতে অর্জন নেই মর্মে বিবেচিত হবে। সকল প্রমাণকে তৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকতে হবে। স্বাক্ষরবিহীন প্রমাণক বিবেচনা করা হবে না। সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, তথ্য অধিকার, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকায় সরকারি অফিসের কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়ায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা