বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৩ এএম
নির্বাচন কমিশন ভবন। ছবি : সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চান দেশের ২৩ হাজার ৩৮০ জন। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এই সংখ্যা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে দুই হাজার এবং স্থানীয়ভাবে ২১ হাজার ৩৮০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে সংস্থাগুলো জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ১০ ডিসেম্বর।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এবারের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় পর্যবেক্ষক থাকবেন। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আসতে পারেন প্রায় ৩০০ পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক।
গতবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৮১টির ২৫ হাজার ৯২০ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার ৩৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভ্ন্নি দেশের কূটনৈতিক মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন দূতাবাস-হাইকমিশন ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে।
ইসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে ১৫৬ পর্যবেক্ষক ও ৭১ সাংবাদিক আবেদন করেছেন।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন চারটি সংস্থা ও ৩৪টি দেশের নির্বাচন কমিশনের ১১৪ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের বিমান ভাড়া ছাড়া সব স্থানীয় ব্যয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বহন করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে ওই দলের চারজন বিশেষজ্ঞ তাদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটও ভোট পর্যবেক্ষণ করতে চায়। থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডাচ, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্জিয়া, উগান্ডা, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, কঙ্গো থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের আবেদন এসেছে।
এ ছাড়া এএফপি, এনডিটিভি, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটস প্রেস ইন্ডিয়া, জিজি প্রেস-জাপান, সুইডিশ রেডিও, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দি ন্যাশনাল, জাপানের দি ইয়োমিউরি শিমবুন, জাঙ্গ ফেইহেইটÑ এসব সংবাদমাধ্যম থেকে সাংবাদিকরা নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে আসতে চান। একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও আবেদন করেছেন।
আর নির্বাচন কমিশন থেকে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল, থাইল্যান্ড, আজারবাইজান, মালয়েশিয়া, মরিশাস, তিউনিসিয়া, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত, সৌদি আরব, চীন, জাপান ও সিঙ্গাপুরের নির্বাচন কমিশনকেসহ ভোট দেখার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সার্ক, ওআইসি মহাসচিব, ফেম্বোসা ও এ-ওয়েব চেয়ারপারসনকেও।
গত সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সাংবাদিকদের জানান, তাদের দেশ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তিনজন পর্যবেক্ষক আসবেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন ঢাকায় জাপান দূতাবাসের ১৩ কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেশিসংখ্যক দেশীয় পর্যবেক্ষক রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। প্রথমে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা না পাওয়াতে ৬৭টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল। কিন্তু ৬৭টি সংস্থার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া সংখ্যাটিও ছিল অনেক কম। এ অবস্থায় দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় দেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে আরও বেশি সংস্থাকে নিবন্ধন দিতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহ্বান করে। এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। দ্বিতীয়বার নিবন্ধন দেওয়া হয় আরও ২৯ সংস্থাকে। এই ২৯ সংস্থার বেশিরভাগই প্রথমবার যোগ্য বিবেচিত হয়নি।
সংস্থাগুলোর তহবিল সংকট
এদিকে নির্বাচন কমিশনের কয়েক কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো তাদের পর্যবেক্ষকদের তালিকা দিলেও শেষ পর্যন্ত কতজনকে মাঠে রাখতে পারবে, তা বলা যাচ্ছে না। এবার নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই নতুন। কয়েকটি সংস্থার প্রধানরা নির্বাচন ভবনে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পর্যবেক্ষণের ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না জানতে চেয়েছে।
নির্বাচনবিশেষজ্ঞ এবং বর্তমানে নিষ্ক্রিয় ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) সাবেক পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন ‘বিশ্বাসযোগ্য ও প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক’ না হলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো তহবিল দেয় না। আর দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তহবিল না পেলে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর এমন সক্ষমতা ও ইচ্ছা নেই যে, নিজস্ব তহবিল দিয়ে নির্বাচনী মাঠে পর্যবেক্ষক নামাবে।