প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৮ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫৭ পিএম
‘নেভিগেটিং দ্য রিপল অ্যাফেক্ট : এক্সামিনিং দ্য ইম্প্যাক্ট অব দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অন হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড চার্টিং পাথস টু ডিউরেবল সলিউশনস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি : সংগৃহীত
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডায়াসপোরা সংগঠন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম (সিবিআইএফ)।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ‘নেভিগেটিং দ্য রিপল অ্যাফেক্ট : এক্সামিনিং দ্য ইম্প্যাক্ট অব দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অন হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড চার্টিং পাথস টু ডিউরেবল সলিউশনস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এই আহ্বান জানানো হয়।
মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে আনুমানিক ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ৬ বছর অতিবাহিত হলেও এই সংকট সমাধানে কোনো জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় ওয়েবিনারটির আয়োজন করে সংগঠনটি। এতে বক্তব্য দেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শাহিদুল হক, মিয়ানমার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের ডিরেক্টর ও ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সির সাবেক প্রধান মুখপাত্র ক্রিস গানিস ও মিয়ানমারের সাবেক এমপি ও আসিয়ান পার্লামেন্টেরিয়াস ফর হিউম্যান রাইটসের বোর্ড মেম্বার উ সুয়ে মং।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রোহিঙ্গারাও হতাশ হয়ে পড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশাল এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় এসব উদ্যোগ সাময়িকভাবে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কার্যকর নাও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধান হচ্ছে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের উদার মনোভাবের জন্য ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা জানান মিয়ানমার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের পরিকালক ও ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সির সাবেক প্রধান মুখপাত্র ক্রিস গানিস।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কমিউনিটির সাহায্যের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও উদার হতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য জবাবদিহিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়া জান্তাকে তাদের কৃতকর্মের জন্য অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিরাপদবোধ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার সংগঠন মিয়ানমার মিলিটারির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ক্রিমিনাল কেইস গঠন করার চেষ্টা করছে।’
এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশের আইনজীবী ও সিভিল সোসাইটির সহযোগিতা চান।
মিয়ানমার পার্লামেন্টের সাবেক এমপি উ সুয়ে মং বলেন, ‘২০১৭ সালে আমাদের ওপর চালানো গণহত্যা এখনও ধীরগতিতে চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোন ও কঠিন নিরাপত্তা কাঠামো নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে এই জনগোষ্ঠী পুনরায় গণহত্যার শিকার হবে। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা কাঠামোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শাহীদুল হক টেকসই, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় সম্পর্কে বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। এই আইন সংশোধন করে, রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জান্তার কথায় আস্থা রাখা যাবে না। তারা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ব্যাপারে যত্নশীল নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যবাসনে বাংলাদেশকে ত্রিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় চুক্তির ব্যাপারে ভাবতে হবে। এই তৃতীয়পক্ষ হতে পারে ইউএন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা কোনো সুপারপাওয়ার।’
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়ের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আরাকানের টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরাকানের মানুষের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন স্তরের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।’
এ ছাড়া নীতিনির্ধারকদের ট্রাক টু ডিপ্লোম্যাসি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।