প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:২০ পিএম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৮ পিএম
সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৭ জানুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই নির্বাচনের আগে নির্বিচারে মামলা, গ্রেপ্তার, বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাজাপ্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন এমনকি রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন তাই হতে যাচ্ছে সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে কেবল তাদেরই ডামি প্রার্থী ও অনুগত দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচন। ফলে এই নির্বাচনে পছন্দমতো যথার্থ বিকল্প বেছে নেওয়া থেকে বাংলাদেশের নাগরিকগণ বঞ্চিত হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অতীতের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের ফলে সরকারের জবাবদিহি বিলীন হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে এবং আইনের শাসন ও সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। আমরা তাই অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এই লক্ষ্যে নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন, সমঝোতায় পৌঁছানো, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি বা জামিন প্রদান এবং নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পাওয়া যাবে। এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি অব্যাহত রাখলে সরকারের বৈধতার সংকট থেকেই যাবে, সমাজে ক্ষোভ ও বিরোধ বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শাহনাজ হুদা ও রোবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, লেখক রেহনুমা আহমেদ, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতুল্লাহ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সাংবাদিক কামাল আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, ব্যবসায়ী আবদুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেন, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউ, চট্টগ্রাম) উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টার ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক নায়লা জামান খান, গবেষক মোবাশ্বের হাসান, মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ আর রাজী, লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এবং মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রোজিনা বেগম।