প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:০৮ পিএম
রাজধানীতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও উত্তরসূরী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কথা বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রবা ফটো
আমাদেরকে মেনে নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় একটি রক্ষণশীল জায়গা, যা সবাইকে মেনে নিতে হবে– এমন করেছেন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় টিকতে পারে না। সর্দার ফজলুল করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ার কথা ছিল। তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সার্বক্ষণিক লেগে থাকতেন। তিনি এখানে টিকে থাকতে পারতেন না। মুনীর চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনের আগে একবার, আন্দোলনের সময় একবার।’
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও উত্তরসূরী আয়োজিত অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদের ১১তম প্রয়াণ দিবসে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সময়ে; এমনকি আমাদের শিক্ষকতার সময়েও হিজাব, বোরকা দেখিনি। আমাদের কোনো সহপাঠী বা ছাত্রী হিজাব পরে এসেছে দেখিনি। পুজিবাদের বিকাশের যে সংকট, তা দেখা যাচ্ছে। পরিবর্তন নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে না, আসবে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে। তাই এমন একটি তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক হাসনাত আবদুল হাই, অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. ফিরদৌস আজিম, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাবেক সচিব মুহাম্মদ আসফ উদ দৌলা।
সাবেক সচিব মুহাম্মদ আসফ উদ দৌলা বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন রাস্তার রিক্সাওয়ালারাও বলেন না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক সরে গেছে নিচের দিকে। সেজন্য আমরা অতীত খুঁজে বেড়াই। যে সমাজে মেরুদন্ড উঁচু করে দাঁড়ালে ঘুরিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় সেখানে সুবিচারের প্রত্যাশা করা যায় না।’
লেখক হাসনাত আব্দুল হাই বলেন, ‘গণতন্ত্র ও একাডেমিক এক্টিভিজম দুটো বিষয় প্রধান। গণতন্ত্র চর্চায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে, মিডিয়া আছে, দল আছে। আর একাডেমিকভাবে গণতন্ত্র চর্চা ঐতিহাসিক পন্থা। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দুটো ছিল কালচারাল এক্টিভিজম ও পলিটিক্যাল এক্টিভিজম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ কালচার ও পলিটিক্যাল এক্টিভিজমে অংশ নিয়েছেন তখন আমরা বলি তারা একাডেমিক এক্টিভিজম। যার প্রথম প্রচলন করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক এক্টিভিজম নেই, দলীয় চর্চা হচ্ছে। এখন যখন এই এক্টিভিজম নিয়ে আলোচনা করছি সেটা স্মৃতিচারণা। এখন তরুণরা সুস্থ রাজনীতির কথা ভুলে গিয়েছে।’
ফিরদৌস আজিম বলেন, ‘আমরা নতুন করে করছি সব কিছু। নতুন করে ভাবছি এই নতুন কার্যক্রমে মূল্যবোধগুলো কতটুকু। নারী পুরুষের সমতার কথা চিন্তা করে কতটুকু। এখন শিক্ষকরা শিক্ষাক্রম নিয়ে কথা বলতে গেলে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়। এসবের মধ্যেও শিক্ষকদের এক্টিভিজমের জায়গাটা বাড়াতে হবে।’
অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ষাটের দশকের একাডেমিক এক্টিভিজম ছিল সেটার ভেতর দিয় ঢুকলে খুব লাভ হবে না। একাডেমিক এক্টিভজমের বদলে অপরচুনিটিজম এসে গেছে। চর্চার জন্য একটা পরিবেশ দরকার, একটা পরিসর দরকার। সেটা আমাদের রাজনৈতিক ঘটনায় অনেক সংকুচিত হয়েছে। আগেকার দিনেও সুবিধাভোগীরা ছিল, এই মাত্রায় ছিল না। আমাদের দেশে মেধা ও দক্ষতার যে পরিমাণ অবমূল্যায়ন হয়েছে এটা পৃথিবীর খুব কম দেশে হয়। বিভিন্ন পদায়নের ক্ষেত্রে মেধার অবমূল্যায়ন কোথাও হয়নি। গণতন্ত্র এখন সংকটাপন্ন।’