প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:০০ এএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৮ পিএম
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড়ের প্রস্তাব সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদে গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় পর্ষদের বৈঠক শুরু হয়েছিল। ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেওয়া শর্ত অনুযায়ী বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ মিশন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জোর দিয়ে বলেছিলেন, আইএমএফের বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তি ঋণের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশে বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ বা মোট হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ দাবি করছে।
গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস হিসাবে কমেছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র গ্রস হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রিজার্ভে যোগ হয়।
গত অক্টোবরে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনার পর আইএমএফ বোর্ডের কাছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব উপস্থাপন করে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। পূরণ করতে না পারা শর্তগুলোর একটি ছিল-জুনের শেষে ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকতে হবে। জ্বালানি তেল, সার ও খাদ্যদ্রব্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার কমেছে।
এ ছাড়া, ন্যূনতম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের কমপক্ষে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত তিন লাখ ২৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি বেধে দেওয়া লক্ষ্যের চেয়ে ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা কম।