প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:২৯ পিএম
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০৪ পিএম
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এতে যারা জড়িত এবং অতিরিক্ত মুনাফা করার চেষ্টায় আছে তাদের আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া, সামুদ্রিক পর্যটন নীতিমালা ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা-২০২৩, চীনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় জামালপুরের মাদারগঞ্জে একটি সোলার পাওয়ার কোম্পানি প্রতিষ্ঠসহ বেশি কিছু প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে পেঁয়াজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে উনি ক্যাবিনেটে না, আলাদাভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, মাঠপর্যায়ে এখন ক্লোজ মনিটরিং হচ্ছে এবং আজকে তার কিছুটা ইম্প্যাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, এটা দেখতে পাচ্ছেন তো আপনারা, পাচ্ছেন না? যে ট্রেন্ড ছিল আজকে তো সে ট্রেন্ড নাই।’
নির্দেশনাটিতে সুনির্দিষ্টভাবে কী ছিল, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ’সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা হচ্ছে, মাঠপর্যায়ে আমাদের নজরদারি বাড়ানো। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের দিকে নজরদারি বাড়ানো এবং আমাদের যারা অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার চেষ্টা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা।’
বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক
বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকের মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ-ইইউ দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ’বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা বিমান চলাচলের জন্য চুক্তি করে থাকি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের বিমান চলাচল চুক্তি আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তারা চুক্তি করতে চান। প্রথম যখন প্রস্তাব এসেছিল, তখন ব্রিটেনসহ ছিল। পরে এটি যখন চূড়ান্ত হয়ে যায়, ততক্ষণে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেক্সিট প্রোগ্রামে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এখন যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রয়েছে, তারা প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চুক্তি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।’
এই বৈঠকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে জেটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সচিব জানান, চীনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি সোলার পাওয়ার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে।
সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ’জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে একটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রায় সাড়ে তিনশ একর জমির ওপর চীনা কোম্পানি সিআরইসি ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ও বাংলাদেশের বিআর পাওয়ারজেন লিমিটেডের (বিআরপিএল) যৌথ উদ্যোগে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
তিনি বলেন, ’এই কোম্পানির ৩০ শতাংশের মালিকানা থাকবে বিআরপিএলের আর ৭০ শতাংশ চীনা কোম্পানির। সেখানে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এজন্য ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়েছে।’
এই কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে চীন কী ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ’এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য পাওয়া যাবে। তবে চীনা কোম্পানির ৭০ শতাংশ মালিকানা থাকলেও পুরো ঋণের দায়িত্ব তাদের। তারা দেশি ও বিদেশি ঋণের দায়িত্ব নেবে। অর্থাৎ এই কোম্পানি গঠনে বাংলাদেশকে কোনো সভরেন গ্যারান্টার দিতে হবে না। পাশাপাশি তাদের আনুপাতিক বিনিয়োগও থাকবে।’
স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করার জন্য ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক নীতিমালা ২০২৩’ -এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিমালায় স্বেচ্ছাসেবীদের আইনি জটিলতা এড়ানো ছাড়াও ছবিসহ পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,’ স্বেচ্ছাসেবা বাংলাদেশে খুব ভালো একটা ক্ষেত্র। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবায় আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবা দেয়। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ভালোভাবে কাজ করছে। তাদের কাজকে সহযোগিতা করার জন্য, তাদের কীভাবে আরও উৎসাহিত করা যায় সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য এ নীতিমালা করা হয়েছে।’
সচিব বলেন, ’’সারা বিশ্বে স্বেচ্ছাসেবকদের চাহিদা আছে। বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা যাতে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পারে, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষিত করা হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারে, তাদের উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। স্কাউট, বিএনসিসি, গার্লস গাইডের মাধ্যমে যেসব কাজ হয়, সেগুলোকে স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। যারা ভালো কাজ করবে তাদের জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তা ছাড়া বৈঠকে 'সামুদ্রিক পর্যটন নীতিমালা-২০২৩' খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।‘’