× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না, অবৈধগুলো উদ্ধারে অভিযান

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১৩ এএম

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১৫ এএম

বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না, অবৈধগুলো উদ্ধারে অভিযান

গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনেও বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে না। তবে নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে বৈধ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। জেলা রিটার্নি কর্মকর্তা চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা বা সংসদীয় আসন এলাকায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিতে পারবেন। অন্যদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্লক রেইড, কম্বাইন্ড (যৌথ) ও কম্বিং (চিরুনি) অভিযান চালানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বিদায়ি অক্টোবর মাসে (১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর) সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি। ২০২২ সালে উদ্ধার হয়েছিল মোট ৫ হাজার ৮৭৯টি। গত অক্টোবর মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উদ্ধার করেছে ২টি পিস্তল, ২টি বিভিন্ন প্রকার বন্দুক, ৪টি ম্যাগাজিন, ৯টি ককটেল ও ১৩৬ রাউন্ড গুলি। এলিট ফোর্স র‌্যাব ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। এর মধ্যে বিদেশি রিভলবার ৫৪টি, দেশি রিভলবার ১৬৭টি, বিদেশি পিস্তল ২৮টি, এসএমজি একটি, ৭ পয়েন্ট ৬২ মিমি রাইফেল ৪৪৩টি, শটগান ৮২টি, পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেল ৮৫টি, পাইপগান ও শুটারগান ৬৪টি। গত বছর র‌্যাব বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে ৫৪ কেজি, গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে ৭ হাজার ১৩৬ রাউন্ড। 

নির্বাচনকালে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিজ এলাকায় বৈধ অস্ত্র জমা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপাররা নিজ নিজ এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্লক রেইড, কম্বাইন্ড ও কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করতে পারেন। কে কোথায় কখন অভিযান পরিচালনা করবেন সে বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। 

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ ডিসেম্বর বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে চাঁদাবাজ, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রের মাধ্যমে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়। 

সাধারণত সব নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র থানায় জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশনের নোটিসের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের নির্দেশ জারি করে। তবে এবার ২০১৮ সালে হয়ে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে অনেক তৎপর থাকতে হয়। ফলে ভিআইপি কেউ ফোর্স চাইলেও দেওয়া সম্ভব হয় না। বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হলে অনেকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এবার বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ভোটের সময় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তা ছাড়া প্রার্থীরা সব এখন মাঠে। তাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। আবার যারা বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত, তারা বৈধ অস্ত্র ছাড়া নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন। অনেক ক্ষেত্রে এটা তাদের জন্য হুমকিও হতে পারে। সে কারণে এবার বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভোটের সাত দিন আগ থেকে বৈধ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ইসি। এ ছাড়া বৈধ অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়েও কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ভোটের কমপক্ষে সাত দিন আগে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে না পারে, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এই নির্দেশের পর কেউ আর অস্ত্র বহন করতে পারবে না।

প্রসঙ্গত ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী শাহজাহান ওমরের (বীরউত্তম) সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র এবং বৈধ অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী (বডিগার্ড) নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশ প্রশাসন এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এ ব্যাপারে কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, পুলিশ সেভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। 

এদিকে শাহজাহান ওমরের সমাবেশে অস্ত্র বিষয়ে স্থানীয় ঝালকাঠি জেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে বৈধ অস্ত্রটি জব্দের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। গত ৪ নভেম্বর ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক সমাবেশে অংশ নেন প্রার্থী শাহজাহান ওমর। ওই সমাবেশে অস্ত্র হাতে তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজী। এ ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারাভিযান চালানোয় ঝালকাঠি-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান পল্লবেশ কুমার কুণ্ড শাহজাহান ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। নোটিসের জবাবে ভুল স্বীকার করেন শাহজাহান ওমর। 

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচন এলে দেশে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। অনেক কিশোর অপরাধীর কাছেও অবৈধ অস্ত্র চলে যায়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয় ৫ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়। সভা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও কিশোর অপরাধ দমনসংক্রান্ত বিষয়ে সব রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও সিসিপি কমান্ডারদেরও বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

দেশে কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে জানতে চাইলে ওই সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। থানা-পুলিশ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখা, পিবিআই ও সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা