× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানবাধিকার ছাড়া জলবায়ুর ন্যায়বিচার নেই

আমিনুল ইসলাম মিঠু, দুবাই থেকে

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:২০ পিএম

মানবাধিকার ছাড়া জলবায়ুর ন্যায়বিচার নেই

ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা যখন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা তখনই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ ও গণহত্যার মাধ্যমে বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যা বৈশ্বিক মানবাধিকারকেও বিপন্ন করে তুলেছে। ফলে বিশ্বের মানুষ এখন জলবায়ুর সঙ্গে মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছে। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও (কপ-২৮) বিষয় নিয়ে সোচ্চার পরিবেশবাদীরা।

এদিকে গতকাল সোমবার সম্মেলনের পঞ্চম দিনে কপ প্রেসিডেন্সির আলোচনায় ছিল অর্থ, বাণিজ্য এবং জেন্ডার দিবস। তবে সম্মেলনের সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের আলোচনার বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী-শিশুর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী। 

এর আগে গত রবিবার প্রথমবারের মতো জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় উঠে মানুষের স্বাস্থগত প্রভাবে বিষয়টি। আর এদিন সম্মেলনের সাইড ইভেন্টগুলোতে জলবায়ুর পাশাপাশি যুদ্ধ ও মানবাধিকার নিয়েও সোচ্চার হয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশবাদীরা। 

প্রতিবাদ সভায় তারা বলেন, যুদ্ধ ও গণহত্যা বন্ধ না হলে জলবায়ুর ন্যায্যবিচার সম্ভব হবে না। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে যুদ্ধ বন্ধে তীব্র দাবি তোলা হয়। এদিকে রবিবার জলবায়ু সম্মেলনে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কপ-২৮ সভাপতির বক্তব্য সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের হতাশায় নিমজ্জিত করে।  

প্রতিবাদ সভায় জলবায়ুকর্মীরা, ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তারা বলেন, মানবাধিকার ছাড়া জলবায়ুর ন্যায়বিচার নেই। ফিলিস্তিন, ইউক্রেনসহ বিশ্বের সব অঞ্চলে যুদ্ধ ও বোমা বর্ষণ বন্ধ না হলে জলবায়ুর সুরক্ষিত হবে না। জলবায়ুকে ভালো রাখা না গেলে মানবাধিকার রক্ষা হবে না। শুধু মানুষের জন্যই না পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণ-বৈচিত্রের জন্যও জলবায়ুর সুস্থতার প্রয়োজন রয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনের তৃতীয় দিনে গাজা উপত্যকায় ৪০০টিরও বেশি বিমান ও স্থল হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১৮০ ফিলিস্তিনি নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করে প্রতিবাদকারীরা। এ সময় ফিলিস্তিনে গত কয়েক দশক ধরে বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিকতার অবসানের আহ্বান জানান তারা।

কপ-২৮ কোয়ালিশন ও গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের আহ্বায়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘আমরা গাজায় অব্যাহত হত্যা ও ধ্বংসের নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আমাদের কথা বলতে হবে। কারণ মানবাধিকার ছাড়া জলবায়ুর ন্যায়বিচার কখনোই সম্ভব হবে না।’

ফিলিপাইনের এশিয়ান পিপলস মুভমেন্টের সদস্য লুক এসপিরিতু বলেন, ‘আমরা মানুষ ও প্রাণীকূলকে রক্ষার জন্য তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার কথা বলছি। কিন্তু অন্যদিকে বুলেট ও বোমার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করা হচ্ছে। যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।’

যুদ্ধ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উল্লেখ করে বাংলাদেশের গবেষক পাভেল পার্থ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মারাত্মক অস্ত্রসহ বিশাল যুদ্ধ সামগ্রির বাজার কার্বণ নিঃসরণ করে। যুদ্ধ কেবল মানুষ, প্রকৃতি ও সভ্যতাকে ধংস করে না, বরং একইসঙ্গে সামাজিক সাংস্কৃতিক সব বিকাশ রুদ্ধ করে। আজ ফিলিস্তিন বা ইউক্রেনে অন্যায় যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে কোনোভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’ 

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য অর্থায়ন করতে বিশ্বনেতাদের বাঁধে না, তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যখন জলবায়ু তহবিল দাবি করে তখন তারা যেন দয়া দাক্ষিণ্য দেখায়। এই যে এত শিশুদের হত্যা করা হল গাজায় এর বিচার না করে জলবায়ু ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। যুদ্ধ এবং যুদ্ধবাণিজ্য বন্ধ হলে পৃথিবীর জলবায়ু অনেক সুরক্ষিত হবে। যুদ্ধ পুরোপুরি জীবাশ্ম জ্বালানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এইসব বিষয় জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় আসতে হবে। জলবায়ু ন্যায্যতা আমাদের মানবাধিকার। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে কোনোভাবেই জলবায়ু সুবিচার সম্ভব না।’

এবারের সম্মেলনের প্রথমবার যুক্ত হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জনস্বাস্থ্যের প্রভাব নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পায় স্থূলতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধানের ওপর। ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলে প্রমাণ-ভিত্তিক প্রতিরোধ, চিকিত্সা এবং স্থূলতার ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী এবং উকিলদের একটি জোট গঠন করা হয়েছে। সম্মিলিত পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে এমইএনএ সংস্থাগুলো এই অঞ্চলের স্থূলতার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে ২০২৪ সালের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ওবেসিটি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশন বলছে, আগামীতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় চার শিশুর মধ্যে একজন (৬৪ মিলিয়ন শিশু) এবং তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন (২১২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক) ২০৩৫ সাল নাগাদ স্থূলতার সঙ্গে বসবাস করবে। এমইএনএ জোট ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণে ২০২০ সালে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০৩৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে ১৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত স্থূলতা নীতি এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয় জোট। কপ-২৮ এমইএনএ জোটটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অর্থায়নের একটি বৃহত্তর অংশ বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়েছে।

গত রবিবার অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ (এনটিডি) নিয়ন্ত্রণ করতে আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৭৭৭ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এই প্রস্তাব দেন। এই তহবিলের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এনটিডি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করবে। এদিন প্রথমবারের মতো জলবায়ু সম্মেলনে স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।

এনটিডি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনায় বিশ্ব নেতারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশে দেশে। দুই দশকে হিটস্ট্রোকে বয়স্কদের মৃত্যুর হাড় বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। বিশ্বের ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ২০ বছরে ৫০ লাখ মানুষ দূষণ, হিটস্ট্রোক ও মশাবাহিত রোগে মারা যাবে। তাই এ সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে একদিকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে হবে গবেষণায়। ইয়েমেনসহ ৩৯টি আফ্রিকান দেশকে লক্ষ্য করে নতুন এই তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু এবং স্বাস্থ্যের সম্পর্ক দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ডেঙ্গু কয়েক মাস হতো, এখন সারা বছর। আগে ঢাকা ও বড় বড় শহরে হতো, এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এসব হচ্ছে। এগুলো ছড়ানোর জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা এখন রয়েছে। এমন আরও চ্যালেঞ্জ আগামীতে আসবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে রক্ষা করতে সবুজ হাসপাতাল প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি। এছাড়া সরকারিভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্ল্যান্ট তৈরি করতে অর্থায়ন করছে এডিবি। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য খাতে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপে বাংলাদেশে এক হাজার ৬০০’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আগে এক দুই-মাসের জন্য ডেঙ্গু দেখা দিলেও এখন তা বছরব্যাপী হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবী কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। তাই আমরা বলেছি বাংলাদেশে খুব কম দূষণ করে। যা এক শতাংশেরও কম। অথচ যারা বেশি করে তাদের থেকেও বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে সাহায্য করতে হবে, যাতে আমাদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে দেয়া যায়। যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের জন্য এখানে একটা ফান্ড তৈরি করা হচ্ছে। আমরা সেই ফান্ড থেকে একটা দাবি প্রকাশ করেছি ও আমাদের অবস্থানও তুলে ধরেছি।’

তবে সম্মেলনের চতুর্থ দিনে কপ-২৮ সভাপতি সুলতান আল জাবেরের বক্তব্য হতাশ করে জলবায়ুকর্মী, গবেষক ও অংশগ্রহণকারীদের। কারণ তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই যেটি ইঙ্গিত করে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধ করলেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ সীমাবদ্ধ করা যাবে।’ 

তিনি বলেন, ‘কয়লা, তেল এবং গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করলে বিশ্ব গুহায় বসবাসকারী মানব সভ্যতায় ফিরে যাবে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির পর্যায়ক্রমে বাতিল করার দাবির পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।

কপ-২৮ সভাপতির বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা।’ 

চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত আইপিসিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে তারা জানান, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে জ্বালানী, শিল্প, পরিবহন এবং নির্মাণ খাত থেকে। ২০২২ সালে প্রায় ৯০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে কয়লা, তেল এবং গ্যাস পোড়ানো থেকে। তাই পৃথিবীর উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৮ শতাংশ, ২০৪০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৯৯ শতাংশ কমাতে হবে। আর মোট গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ, ২০৪০ সালের মধ্যে ৬৯ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ কমাতে হবে।’

ল্যানসেট কাউন্টডাউনের নির্বাহী পরিচালক ম্যারিনা রোমানেলো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কপ-২৮ সভাপতির এমন বক্তব্য সম্মেলনের স্বাস্থ্য দিবসকে পুরোপুরি বিতর্কিত করেছে। স্বাস্থ্য সম্প্রদায়কে আলোচনার টেবিলে এনে এমন বক্তব্য বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। কারণ আমাদের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের ওপর জীবাশ্ম জ্বালানির বিপর্যয়কর প্রভাব পড়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিকে পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। সব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান এমন একটি জলবায়ু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করুন যেখানে আমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা যায়।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বাংলাদেশের রোডম্যাপ

এদিকে গতকাল সোমাবর বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২৩-৩১ বাংলাদেশের সৌর সেচের স্কেল-আপ রোডম্যাপ ঘোষণা করে। গতকাল জলবায়ু সম্মেলনের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোডম্যাপটি ঘোষণা করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিংসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুত বিভাগের যুগ্ম সচিব নিরোদ চন্দ্র মন্ডল।

এ সময় জানানো হয়, বাংলাদেশে ১.২২ মিলিয়ন ডিজেল পাম্প এবং চার লাখ ৩০ হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক পাম্প ক্ষুদ্র সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতি গ্রীষ্মে এক মিলিয়ন টনেরও বেশি ডিজেল এবং ২ গিগাওয়াট শক্তি খরচ করে। সেচ মোট কৃষি খরচের ৪৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং ৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সেচ দেয় যেখানে ৭৩ শতাংশ পাম্প ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে।

রোডম্যাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমানো এবং সেচের ক্ষেত্রে ভর্তুকি গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কম করা এবং সেচের খরচ কমানো। রোডম্যাপের লক্ষ্য হল ২০৩১ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার সৌর সেচ পাম্প যুক্ত করার মাধ্যমে চার লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া, ১.৩ মিলিয়নের বেশি কৃষকদের উপকার করা এবং বছরের ৩ লাখ টন ডিজেল খরচ কমানো। এজন্য প্রয়োজন মোট ১.৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল। যারমধ্যে অন্তত ৮০০ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণ বা অনুদান থেকে যোগার দেয়া হবে। বাকি টাকা সরকারি তহবিল এবং কৃষকদের অবদান বলে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যুত ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা ক্লিন এনার্জির কথা বলেছি। এরমধ্যে সোলার অন্যতম। ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে রূপান্তর হবে বাংলাদেশ। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে যেতে বেসরকারি উদ্যোগ লাগবে। আমরা চাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে বেরিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে যেতে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা