× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কপ-২৮ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির তহবিল যাবে বিশ্বব্যাংকের হাত ঘুরে

আমিনুল ইসলাম মিঠু, দুবাই থেকে

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৩৯ এএম

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫২ এএম

 দুবাইয়ের এক্সপো সিটি ২০২০ এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে  (কপ-২৮) জলবায়ু সম্মেলন। প্রবা ফটো

দুবাইয়ের এক্সপো সিটি ২০২০ এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে (কপ-২৮) জলবায়ু সম্মেলন। প্রবা ফটো

জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছে বাংলাদেশের জন্য সুখবর দিয়ে। এদিন জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৮) দ্বিতীয় দিনে এশিয়া থেকে ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ান লিডার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু বিষয়ে কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিযুক্ত মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে আইওএম এবং জাতিসংঘ সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি সংস্থা।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংযুক্ত আরব আমরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটি ২০২০ এ অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে একটি উচ্চস্তরের প্যানেল অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গাইনাইজেশন ফর মাইগ্রেশন-আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপে থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।

এ সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ‘অভিযোজন এবং সহনশীলতার জন্য জলবায়ু গতিশীলতাকে বাগে আনা’ শীর্ষক উচ্চস্তরের এ প্যানেল অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এতে বলা হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ক্লাইমেট মোবিলিটি সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুজনিত কারণে বাধ্য হয়ে অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতির দিকটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিয়ে আসেন। এর আগেও বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ঢাকায় আইওএমের সহযোগিতায় আয়োজিত দুটি সংলাপ এবং গত বছর মিশরের শার্ম এল শাইখে কপ-২৭ এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত চার হাজার ৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল সামাজিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উদ্যোগের নানা দিক তুলে ধরা হয়।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং জলবায়ু গতিশীলতা এবং এ থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ক্রমাগত নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বের সমর্থন। বাংলাদেশ সন্তুষ্ট যে, এখন জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি বিস্তৃত জোট এই ইস্যুতে একযোগে কাজ করছে।

এর আগে সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনে শুরু হয় সম্মেলনের দুদিনব্যাপী লিডার্স সামিট। এ দিন সকালে প্রবেশ পথে ছিল দীর্ঘ লাইন। অংশগ্রহণকারীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে প্রবেশ করতে হয়েছে সম্মেলনস্থল দুবাই সিটি এক্সপোতে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সে সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি ও পরিবেশকর্মীরা বিরক্তি প্রকাশ করেন।

সামিটে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ব্রিটেনের রাজা চার্লসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। এবারের কপ লিডার্স সামিটে যোগ দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে যোগ দিতে পারেননি খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। তবে এক বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, কপ-২৮ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট কিছু দেশ বা ব্যবসার স্বার্থের পরিবর্তে সকলের ভালো এবং নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করবেন।

দুবাইতে জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) শুরুতে বক্তৃতা দেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস। শুরুতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আট বছর আগে প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতার সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছিল। যা প্যারিস চুক্তিতে পরিণত হয়েছিল। আশা এবং আশাবাদের একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, যখন জাতিগুলো সকলের মঙ্গলের জন্য পার্থক্যকে একদিকে রাখে। আমি আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রার্থনা করি যে কপ-২৮ সম্মেলন সত্যিকারের রূপান্তরমূলক পদক্ষেপের দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হবে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীরা এত দিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। আর আমরা বৈশ্বিক উঞ্চায়ন উদ্বেগজনক পৌঁছে যেতে দেখছি।

জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জলবায়ুর লক্ষ্যপূরণে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ২০২৮ সালের ‘কপ-৩৩’ ভারতে আয়োজনেরও প্রস্তাব দেন তিনি।

১৩ দিনের এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জলবায়ু প্রকল্পে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেসরকারি তহবিল গঠন করেছে স্বাগতিক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ‘আলটেরা’ নামক তহবিলটি ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। 

সম্মেলনে ইসরাইলের উপস্থিতিতে এদিনই কপ-২৮ সম্মেলন ত্যাগ করেন ইরানের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, ইসরাইলের উপস্থিতি সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন মহাসম্মেলনে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, বিশ্ব নেতারা খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের বিষয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, এটি প্রথম কপ রেজোলিউশন। টেকসই কৃষি, রেজিলিয়েন্ট ফুড সিস্টেম এবং ক্লাইমেট অ্যাকশান বিষয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ১৩৪ দেশ। দেশগুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) এবং ২০২৫ সালে কপ-৩০ দ্বারা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় খাদ্য ও জমির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই রেজোলিউশন বাংলাদেশ ও সাক্ষর করেছে বিশ্বব্যাপী, খাদ্য ব্যবস্থা সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, যার সিংহভাগই আসে শিল্পোন্নত কৃষি, বিশেষ করে পশুসম্পদ এবং সার থেকে। জলবায়ু সংকট ইতিমধ্যেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে, কারণ চরম আবহাওয়ার ঘটনা যেমন বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং দাবানল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীর গতির প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং খাদ্যের ঘাটতি।

এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন লস অ্যান্ড ড্যামেজের আওতায় নতুন করে ইতালি ১০৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ডেনমার্ক ২৫ মিলিয়ন, নেদারল্যান্ড ১৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ৫০ দশমিক ৬ মিলিয়ন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া এডাপটেশন ফান্ড হিসেবে সুইজারল্যান্ড ১৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারসহ সব মিলিয়ে প্রথম দুই দিনে প্রায় ৫৭৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ঘোষণা এসেছে জলবায়ু সম্মেলন থেকে। এরমধ্যে সম্মেলনের প্রথম দিনই লস অ্যান্ড ড্যামেজের আওতায় এসেছিল প্রায় ৪২৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা দেয় বিশ্বের ছয় রাষ্ট্র।  এছাড়া শুক্রবার পর্যন্ত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড হিসেবে ৯ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার ফান্ড গঠন হয়েছে। তবে এই অর্থ থেকে বাংলাদেশ তাদের প্রাপ্য কতটুকু আদায় করে নিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, প্রক্যেকটি দেশ অর্থ দিবে বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে।

পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে যে অর্থ দেওয়া হবে সেটি থেকে বিশ্বব্যাংক তার পরিচালনা ব্যয় হিসেবে একটি বড় অংশ নিয়ে যাবে। এতে করে এই ফান্ডের যে মুখ্য উদ্দেশ্য সেটি অর্জিত হওয়ার পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাংকের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডটি অনুদান না হয়ে যদি ঋণ হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য নতুন ঋণের বোঝা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ ফান্ড তৈরির শুরু থেকেই বাংলাদেশের বড় ভূমিকা ছিল। আর বাংলাদেশ জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই এই ফান্ড তৈরি হলে বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবেই বড় একটি অংশ প্রাপ্তির আশা রাখে।

সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তহবিল হিসেবে এই দুদিনে যতটুকু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে তা মোট প্রয়োজনের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র অংশ। তাই এই মুহুর্তে উত্তরের উন্নত দেশগুলোকে দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা