× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অর্থনীতি বেহাল সরকারি হিসাবেই

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০১:০২ এএম

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২৯ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

অর্থনৈতিক সংকট যে দেশের প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন কার্যক্রমের গতি কমিয়ে দিচ্ছে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সরকারি হিসাবেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দেশের আর্থিক খাতের দুর্বল অবস্থা উন্মোচিত হতে শুরু করে। গবেষণা পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যাচ্ছে, ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, শিল্প খাতের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষের আর্থিক কার্যক্রম কমে গেছে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। গত ৩১ মাসের মধ্যে এই প্রবাহ দুই অঙ্কের নিচে নামার রেকর্ড গড়েছে।

সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি শূন্য ছিল বছরজুড়েই। চলতি বছর এই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় না গেলেও এর আগের অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে আর্থিক কার্যক্রম ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদনের চার প্রান্তিকের সাময়িক হিসাবে এ চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চাহিদার সংকটের কারণে দেশের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ফলে মানুষের লেনদেন খানিকটা কমে এসেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আর্থিক কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি শূন্য

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে আর্থিক ও ইনস্যুরেন্স কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্য। পুরো বছরেও দেশের আর্থিক কার্যক্রম ১ শতাংশও হয়নি। অথচ আগের অর্থবছরের চার প্রান্তিকে কোনো-না কোনোভাবে দেশের আর্থিক খাত ও ইনস্যুরেন্স খাতের প্রবৃদ্ধি সচল ছিল। অবশ্য ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে আর্থিক কার্যক্রম ছিল ঋণাত্মক।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংস্কার প্রস্তাবকে আমলে নিয়ে গড় জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ তিন মাসের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য পুরো বছরের গড় হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। 

সর্বশেষ ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বড় ঋণগ্রহীতারা ঋণ নিয়ে ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেওয়ায় সাধারণ গ্রাহকরা ব্যাংকের সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে খাচ্ছে। এতে দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটও দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ধারদেনা করে চলতেও হিমশিম খাচ্ছে।

শেষ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়েছে

বিবিএস বলছে, আর্থিক ও ইনস্যুরেন্স খাতের কার্যক্রম চার প্রান্তিকে ছিল মোটামুটি। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ খাতে কার্যক্রম ছিল ২২ হাজার ৭০২ কোটি টাকার। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২২ হাজার ৯৪৫ কোটি, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৩ হাজার ৩৩১ কোটি এবং শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন প্রান্তিকে ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকার কার্যক্রম। 

বিবিএস প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো অবস্থানেই ছিল। এ সময় দেশে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে তা কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে নেমে আসে। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তা আরও কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে। শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) অবশ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে উঠেছে।

প্রথা অনুযায়ী, আগে ছয় মাস বা নয় মাসের তথ্য হিসাব করে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই জিডিপির সাময়িক বা প্রাথমিক হিসাব প্রকাশ করা হতো। পরে অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন-চার মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করত পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে আইএমএফ-এর ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। তখন ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত জিডিপির তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়। গত মঙ্গলবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের চার প্রান্তিকের জিডিপির তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের অভিমত

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি আয় প্রথমদিকে ভালো ছিল, পরে ধীরে ধীরে কমছে। মেশিনারিজ কিংবা কাঁচামাল আমদানিতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। সার্বিক চিত্রে বলা যায়, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। এর বড় কারণ আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশি মুদ্রার অভাব। যার কারণে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে সম্পৃক্ত পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না এলসি খোলার জটিলতার কারণে। ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, এলসিও খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অবশ্যই আছে, যদিও অর্ধেকের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের টাকাও আছে, ইচ্ছাও আছে। কিন্তু ডলার নেই। ফলে উৎপাদন করতে পারছে না, বিক্রিও করতে পারছে না।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘চাহিদার দিকে তাকালে দেখি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, মাসের পর মাস মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে রয়েছে, গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশর ওপরে থাকছে। সে তুলনায় মজুরি বৃদ্ধি তেমন নেই। কাজেই আয় বৃদ্ধির সুযোগ হচ্ছে না। ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সে তুলনায় আয় না বাড়ার কারণে আগে যা কিনত, এখন তা কিনতে পারছে না। ব্যয়ের সংকোচন করতে হচ্ছে। ফলে এখানেও চাহিদাকে কমিয়ে দিয়েছে। সুতরাং চাহিদার দুর্বলতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর ডলার সংকটের কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শেষ সময়গুলোতে কমেছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা