× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মাশরুমে খুলছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১২ এএম

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩২ পিএম

মাশরুম চাষে সাফল্য পেয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। প্রবা ফটো

মাশরুম চাষে সাফল্য পেয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। প্রবা ফটো

পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুমকে গরিবের মাংস বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ফসলটি বাংলাদেশে উদীয়মান হওয়ায় এখানে বিনিয়োগে সহজ সাফল্যের সম্ভাবনাও বেশি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে মাশরুম চাষে উচ্চ সাফল্য পেয়েছে অনেকে। রাজধানীর ঝিগাতলায় অবস্থিত ফ্রাঙ্ক মাশরুম কোম্পানি লিমিটেড তারই একটি। এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার ১৯৮৩ সাল থেকে মাশরুম চাষ ও ব্যবসা করছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক আড়াই থেকে তিন মণ মাশরুম বিক্রি করেন। প্রতি কেজি তিনি ২০০ টাকায় বিক্রি করেন। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘অল্প পুঁজি নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার মতো পেশা মাশরুম চাষ।’ মাত্র ১০ হাজার টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা যায়। সেজন্য আবার সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রশিক্ষণসহ ঋণও দিচ্ছে।

ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স করে জমজম মাশরুম ফুডস নামে বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মরিয়ম আক্তার ওরফে লাবণ্য লতা নামে এক উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ২০০৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে ৪৫ দিনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাশরুম চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তারপর মাশরুম চাষই তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে তার অফিসের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় এক লাখ টাকার ওপরে। তিনি বলেন, গার্মেন্টসের বিকল্প কর্মসংস্থানের জায়গা হতে পারে মাশরুম চাষ। 

২০১৩ সাল থেকে মাশরুম চাষ করছেন পাপিয়া আক্তার। সাভারের রেডিও কলোনির এই উদ্যোক্তা জানান, তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে ৮ লাখ টাকার ওপরে পুঁজি রয়েছে তার। মাশরুম চাষের অর্থে ছেলেকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন। মেয়েকে আইনে মাস্টার্স করিয়েছেন। তিনি বলেন, তার সঙ্গে ৩০ জন মাশরুম চাষি রয়েছে। পাপিয়া নিজে মাশরুমের বীজ তৈরি, চাষ ও বাজারজাত করে থাকেন। শীত মৌসুমে প্রতি মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আর গ্রীষ্মে ৩০-৩৫ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন পাপিয়া। তিনি বলেন, নারীরা বাসায় থেকে ঘরের ভেতর, বারান্দা অথবা পরিত্যক্ত জায়গায় মাশরুম চাষ করতে পারেন। এই কাজ তাকে মিল-কারখানায় চাকরি করে আয় করার চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ এনে দিয়েছে। 

সরকার বাংলাদেশে মাশরুম চাষের প্রকল্প নিয়েছে কয়েক দশক আগে। দেশের ১৬০ উপজেলায় প্রতিবছর একজন করে পাঁচ বছরে ৮০০ উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. আখতার জাহান কাঁকন বলেন, ‘মাশরুম উচ্চমূল্যের ফসল। এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রত্যেক উদ্যোক্তার অধীনে ৩০ জন করে মোট ২৪ হাজার দলভুক্ত চাষি তৈরি করা হবে। তাদের বীজ উৎপাদন, মাশরুম উৎপাদন, বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৩৪টি হর্টিকালচার সেন্টারের আওতায় ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় চলছে এই প্রশিক্ষণ।’

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৬ সালে থাইল্যান্ড থেকে দেশে প্রথম স্ট্র মাশরুমের বীজ এনে উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তর করা হয়। পরে ঢাকার আসাদ গেট হর্টিকালচার সেন্টারে তা চাষ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯-৮০ সালে জাপান অভারসিজ কো-অপারেটিভ ভল্যানটিয়ার সদস্য ও মাশরুম বিশেষজ্ঞ নাকানোর নেতৃত্বে ঢাকার সাভারের সোবহানবাগ হর্টিকালচার সেন্টারে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সাবেক উপপরিচালক ড. নিরদ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মাশরুম চাষে উর্বর জমির প্রয়োজন নেই। শুধু ফেলনা কৃষিজ বা বনজ বর্জ্য যেমন ধানের খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি ইত্যাদি ব্যবহার করে মাশরুম উৎপাদন করা যায়। বালাইনাশক বা রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না।’ তিনি বলেন, ‘মাশরুম টিউমার নিরাময় করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের ১০ শতাংশ মানুষও যদি মাশরুম খায়, তাহলে প্রতিদিন ৪০০ টন মাশরুম প্রয়োজন।’

তা ছাড়া ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভারের রোগীদের জন্য মাশরুম খুব আদর্শ খাবার বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম। মাশরুম প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণকরণ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন বর্তমান সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতিবছর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের জন্য মাশরুম আমদানি করা হয়। দেশে যদি মাশরুম চাষ বাড়ানো যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তা ছাড়া রপ্তানি করে প্রচুর আয় করা যাবে। সমাজসেবা অধিদপ্তর বিনা সুদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেবে না।’ গাজীপুরে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন কৃত্রিম তাপমাত্রায় বিভিন্ন রকম মাশরুম চাষ করে রপ্তানি করছে। আমরাও পারি। কাঁচা মাশরুম তরকারিতে দিয়ে বা শুকিয়ে গুঁড়া করে চা, তরকারি, রুটি, কেকসহ বিভিন্ন প্রকারের খাবারে ব্যবহার করা যায়। এসব খাদ্য খুবই স্বাস্থ্যসম্মত এবং ব্যয় কম।’

মাশরুমকে গরিবের মাংস আখ্যায়িত করে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘মাশরুম অপ্রচলিত প্রোটিনের উৎস। এটি ওষধিগুণসম্পন্ন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। মাশরুম চাষে আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে, গ্রামের বেকার নারী ও ছেলেরা মাশরুম চাষ করতে পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা