কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৮ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২০:০৮ পিএম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, পোশাকশ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে হুমকি বোধ করছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মান উন্নয়ন নিয়ে দেশটির নতুন উদ্যোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখছেন না বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকা সফররত কমনওয়েলথের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মানোন্নয়ন নিয়ে নতুন একটি স্মারকপত্রে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর এ নিয়ে কথা বলেছেন ব্লিঙ্কেন। তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তারের বিষয়টি উঠে আসে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ’আমরা পরবর্তী আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করব। যদি আমার স্মৃতি ভুল না করে থাকে, তাহলে কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, ২০১০ সালে। তবে তিনি একা নন, একাধিক শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ’পরে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, তৈরি পোশাক খাতে যে অরাজকতা হয়, সেটা খুবই টেম্পরারি নেচারের (অস্থায়ী প্রকৃতির)। হঠাৎ করেই এটা শেষ হয়ে যায়, আবার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের পর পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু ক্রেতা যখন কারখানাগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে, তখন কল্পনা আক্তারসহ আরও দুয়েকজন মিলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ’কাজেই কল্পনা আক্তার যেটা বলেছেন যে তিনি আমাদের বা অন্য কারও কাছ থেকে হুমকির শিকার হয়েছেন, এর ব্যাখ্যা আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব। কল্পনা আক্তার খুবই সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ড কিংবা আপনারা যদি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এই কথা বলেছেন কি না, বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন, তাকে এটা জিজ্ঞেস করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ’কিন্তু কল্পনা আক্তার যে হুমকির কথা বলেছেন, সেটা অতীতে বাংলাদেশে কাউকে বলেননি। অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, সেটা আমরা জানতে চাইব। পাশাপাশি একটি বিষয় পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন যে বৈঠকে এই কথা বলেছেন, সেটা হলো এশিয়া-প্যাসেফিক ইকোনমিক কনফারেন্স। যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যোগ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ’ব্লিঙ্কেনের বক্তব্য বাংলাদেশের উদ্দেশে দেওয়া না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টসকর্মী কল্পনা আক্তার। আরও দুটি দেশের কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু তিনি উল্লেখ করেননি। গার্মেন্টস কিংবা টেক্সটাইলের কিছু ছিল না তাতে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা, শক্তিশালী ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়।’
‘নির্বাচনে কোনো একটি দলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ’নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ সৌন্দর্য বাড়ায়। তবে একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের গঠনতন্ত্রে ও সংবিধানে বিশ্বাস করে না; এ রকম কাউকে দিয়ে শুধু লোক দেখানো বা শোভাবর্ধনেরও প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে কোনো একটি বা বিশেষ কোনো দলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না।’
কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পাঠাবে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ’এই সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের কর্তা ব্যক্তিরা। তবে আমাদের প্রত্যাশা তারা আসবেন, তাদের লজিস্টিক ও প্রটোকল যা প্রয়োজন আমরা সেটা নিশ্চিত করব।’
তিনি বলেন, ’অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ মনে হয়—এর আগে যারা এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে এই প্রতিনিধিদলের গুণগতমানের ভিন্নতা আছে বলে আমার মনে হয়েছে।’