প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৬ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৯ পিএম
সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। প্রবা ফটো
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হোক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তা চায় না।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সংস্থার ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিকের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘দুর্নীতিবাজরা নেতৃত্বে আসুক, সেটা আমরাও চাই না। তবে এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়।’
মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি দুর্নীতি হয়। দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতির সাহায্যকারী, দুর্নীতিবাজদের অফিসে চাকরি করে যারা, যারা সহায়তা করে দুর্নীতির সুবিধাভোগী, তার বিপরীতে আমরা কত জন? এত বড় একটা শ্রেণির বিরুদ্ধে শুধু দুদক আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। এটা কালেক্টিভ ইফোর্টের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এগুলোকে অ্যাড্রেস করেই আমাদেরকে এগোতে হবে।’
নির্বাচন সামনে রেখে দুদকের কোনো প্রস্তুতি আছে কি না– দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তো মনে করি, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না। অতীতে যেভাবে হয়েছে, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) ও দুদক আইনে যা আছে আমরা সেভাবেই কাজ করব। আমরাও চাই দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতায় না আসুক।’
অভিযোগপত্র দাখিলে পরও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা চাকরি করছেন, পদোন্নতি পাচ্ছেন, এমন নজির রয়েছে– প্রশ্নের জবাবে মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সরকারের সর্বনিম্ন বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী হোক, আমাদের সচিবের স্বাক্ষরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। উনার দায়িত্ব সবাইকে জানানো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যারা যারা পদোন্নতি পায় এটা তাদের নিজস্ব নীতিমালার বিষয়। আমরা অভিযোগপত্র দিয়ে আদালতে সোপর্দ করব।’
জনপ্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছি জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনগণ শুধু প্রত্যাশা করবে, তারা সাহায্য করবে না, দুর্নীতি নির্মূলে নিজেরা কাজ করবে না, আইনকে সহায়তা করবে না, তাহলে তো প্রত্যাশা পূরণ হবে না। জনগণ শুধু প্রত্যাশা করলেই হবে না, আমাদেরকে সহায়তা করতে হবে। সহযোগীতা পেলে আমরা প্রত্যাশার কাছাকাছি যেতে পারব।’
এই সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি নির্মূলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক-বীমার দুর্নীতি হয়ে যাওয়ার পর, হয়তো সাজার আওতায় নেওয়া যায়। তবে অনেক সময় নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যাংক-বীমার দুর্নীতি আমরা এখানে বসে রোধ করতে পারব না। লোন প্রসেসিংয়ের সময় আমরা যদি যাই তাহলে সব অচল হয়ে যাবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
নতুন কমিশনে ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় ৪২৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। নতুন কমিশন গঠনের পর থেকে ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৪৩ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (তদন্ত) আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আশংকার যে জায়গা সেটা হলো আমাদের কালচারে যেন দুর্নীতিটা স্থায়ী কোনো শেইপ না নেয়। কারণ সংস্কৃতিটা একেবারে অনেক গভীরে প্রোথিত, তাই আমাদের সংস্কৃতিতে দুর্নীতি স্থায়ীভবে ঝেঁকে না বসে। যদি এটা আমাদের শেঁকড়ে ঝেঁকে বসে তখন এটাকে নির্মূল করা কঠিনই নয় বরং দূরহ হবে।’
এসময় দুদকের এই কমিশনার সাংবাদিকদের তথ্য-তত্ত্ব দিয়ে মানুষকে সচেতন ও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্ছার হতে বলেন।