প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৫ পিএম
জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলন। প্রবা ফটো
দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনে ৩৩ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারীরা। পরিবেশ ও কৃষিজমির ক্ষতি হয় এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করতে বলেছেন তারা। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এমন দাবি করে তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশ মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিলচন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম, মাকিকু আরিমা, ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী প্রমুখ।
তারা প্রস্তাব করেছেন, স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও মানুষের উপর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মসংস্থান হারানো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে নতুন কর্মসংস্থান নয়, পূর্বের কর্মসংস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। জীবাশ্ম ও অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ফিরে আসতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়াতে হবে।
তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়, সাফারি পার্কের নামে বনাঞ্চল ধ্বংস ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত বন্ধ করতে হবে। নদীগুলোকে ক্ষয়, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সমাধানমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসতি থেকে উচ্ছেদের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান ও জীবনধারণের উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন ছাড়াই আগ্রাসী শিল্পায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে।
প্রস্তাবনায় শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে আয়োজিত সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা ভুক্তভোগী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমস্যা ও সংকট তুলে ধরেছেন। সেসব বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো আগামী জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি ও ক্ষতিপূরণে দাবি কোনোভাবেই অনুদানের সাথে সম্পর্কিত ঐচ্ছিক বিষয় নয়। যুগের পর যুগ ধরে ধনী দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও ভ্রান্ত উন্নয়ননীতির কারণে আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। দেশের ভেতরে পরিবেশ সংকটাপন্ন জায়গাগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দখল-দূষণে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে। সমস্যা ও সংকট সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এপিএমডিডির লিডি ন্যাকপিল বলেন, জীবাশ্ব জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টির সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। জীবাশ্ব জ্বালানি সস্তা হলেও নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে নিয়মিত জ্বালানি কিনতে হয় না বলে এটাতে তুলনামূলক খরচ কম ও নিরাপদ।
গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম বলেন, জলবায়ু সংকট মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি সংকট। যা মোট বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৯১ শতাংশের জন্য দায়ী। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসলে শুধু যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজে আসবে তা নয়। জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সহজলভ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।