১৯৭৩ থেকে ২০১৮
সংকলন : কাজী হাফিজ
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২০:০১ পিএম
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ২০:২৭ পিএম
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪৫ বছরে দেশে ১১টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাঁচবার, বিএনপি চারবার ও জাতীয় পার্টি দুবার সরকার গঠন করে।
প্রথম সাধারণ নির্বাচন : ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর এর অধীনে জাতীয় সংসদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি মো. ইদ্রিস। আওয়ামী লীগসহ মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ভোটার ছিল ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন।
প্রদত্ত বৈধ ভোট ছিল ১ কোটি ৮৮ লাখের বেশি (৫৫.৬২ শতাংশ)। ১২০ জন নির্দলীয় প্রার্থীসহ ১ হাজার ৭৮ জন প্রার্থী ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ ২৮৯টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ ২৮২টিতে জয়লাভ করে। বাকি সাতটি আসনের মধ্যে জাসদ একটি, জাতীয় লীগ একটি এবং নির্দলীয় প্রার্থীরা পাঁচটি আসন লাভ করেন। গঠিত সংসদ স্থায়ী ছিল আড়াই বছর।
দ্বিতীয় : ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসকদের তত্ত্বাবধানে তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির আওতায়।
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার অধীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আস্থাভাজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নুরুল ইসলামের নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। মোট ভোটার ছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ কোটি ৩৪ হাজার ৭১৭ জন এবং নারী ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার ৫২২ জন। ভোট দেয় ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২৪ জন (৫০.৯৪ শতাংশ)। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ১২৩ জন। বিএনপি ২৯৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ২০৭ আসনে। দলটির ভোটপ্রাপ্তি ছিল ৪১.১৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ (মালেক) ২৯৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয় ৩৯টিতে। আওয়ামী লীগ (মিজান) ১৮৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে পায় দুই আসন। জাসদ ২৪০ আসনে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয় আটটিতে। মুসলিম ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২৬৬ আসনে প্রার্থী দিয়ে পায় ২০টি আসন। অন্য দলগুলোর মধ্যে ছয়টি দল আটটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসন লাভ করে। গঠিত সংসদ স্থায়ী হয় তিন বছর। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সংসদ বিলুপ্ত করা হয় এবং এইচএম এরশাদের সামরিক শাসন জারি হয়।
তৃতীয় : ১৯৮৪ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচন দেওয়া হলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় নির্বাচন হয়নি। ১৯৮৬ সালের ৭ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট তা বয়কট করে। বিচারপতি এটিএম মাসউদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে এরশাদের জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ ১১টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল ১ হাজার ১২৪ জন। জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে পায় ১৫৩টি আসন। আওয়ামী লীগ ২৫৬ আসনে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয় ৭৬টিতে। জামায়াত ৭৬ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১০টিতে। অন্য আটটি দল ৩৩ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টি আসন পান। মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ কোটি ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৯ জন এবং নারী ২ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯৩ জন। ভোট দেয় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৮৮৯ জন (৬০.৩১ শতাংশ)। গঠিত সংসদ টিকে ছিল ১৭ মাস। ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি এরশাদ সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।
চতুর্থ : ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ বিচারপতি এটিএম মাসউদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টি, জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) এবং জাসদ (শাজাহান সিরাজ), ফ্রিডম পার্টিসহ কয়েকটি ক্ষুদ্র দল এবং ২১৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৮টিসহ ২৫১ আসন, রবের সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, জাসদ (শাজাহান সিরাজ) তিনটি, ফ্রিডম পার্টি দুটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৫টি আসন লাভ করেন। এ ফলাফল মানুষ প্রত্যাখ্যান করে এবং সরকার হটাতে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে পদত্যাগ করেন এবং একই সঙ্গে সংসদ ভেঙে দেন। চতুর্থ সংসদ স্থায়ী হয়েছিল ২ বছর ৭ মাস।
পঞ্চম : বিচারপতি মো. আব্দুর রউফের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জাতীয় সংসদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ১৯৯১ সালের ২ মার্চ। কিন্তু এদিন শবেবরাত হওয়ায় ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এদিন ৩০০ আসনের মধ্যে ভোটগ্রহণ হয় ২৯৮টি আসনে। মুন্সীগঞ্জ-৩ ও কুষ্টিয়া-২ আসনের নির্বাচন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে স্থগিত রেখে পরে ১৪ ও ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৭৫টি রাজনৈতিক দলের ২ হাজার ৩৬৩ জন এবং ৪২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন। বিএনপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪০ আসন, আওয়ামী লীগ ২৬৪টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৮৮ আসন, জাতীয় পার্টি ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৩৫ আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ২২২ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১৮টি পায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) পাঁচটি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি পাঁচটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ মোজাফফর) একটি, গণতন্ত্রী পার্টি একটি, এনডিপি একটি, জাসদ (শাহাজান সিরাজ) একটি আসন লাভ করে। ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল বিএনপির ৩০.৮১, আওয়ামী লীগের ৩০.০৮, জাতীয় পার্টির ১১.৯২ এবং জামায়াতের ১২.১৩ শতাংশ। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৬ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩ জন ভোটার ভোট দেয়। ভোট প্রদানের হার ছিল ৫৫.৪৫ শতাংশ। নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও এরশাদ পাঁচটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয়ী হন। শেখ হাসিনা তিন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে জয়ী হন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নির্বাচন ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। সংসদ স্থায়ী ছিল ৪ বছর ৮ মাস।
ষষ্ঠ : ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচন ছিল দেশের অন্যতম একটি ব্যর্থ নির্বাচন। গঠিত সংসদ মাত্র ১২ দিন স্থায়ী হয় এবং এ সংসদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুসারে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ষষ্ঠ নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টিসহ আরও নামসর্বস্ব ৪২টি দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। ভোটগ্রহণ হয় মাত্র ২১ শতাংশ। বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন লাভ করে। ফ্রিডম পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি আসন পান। ১০টি আসনের ফলাফল অসমাপ্ত থাকে এবং আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করেন।
সপ্তম : ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সাধারণ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৪ জন এবং নারী ২ কোটি ৭৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪১ জন। ৮১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ২৯৩ আসনে। এ ছাড়া জাকের পার্টির ২৪১, ইসলামী ঐক্যজোট ১৬৬, গণফোরাম ১০৪, জাসদ (রব) ৬৭ ও অন্যান্য দলের ৮৬৪ জন প্রার্থী ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ২৮৪ জন। ২ হাজার ৫৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে নারী ছিলেন ৪৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২, জামায়াত তিন, ইসলামী ঐক্যজোট এক, জাসদ (রব) এক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি আসনে বিজয়ী হন। ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪, বিএনপি ৩৩.৬০, জাতীয় পার্টি ১৬.৪০, জামায়াত ৮.৬১, ইসলামী ঐক্যজোট ১.০৯, জাসদ (রব) ০.২৩, স্বতন্ত্র ১.০৬ এবং অন্যান্য দল ১.৬৭ শতাংশ। শেখ হাসিনা তিনটি আসনের তিনটিতেই, খালেদা জিয়া পাঁচ আসনের পাঁচটিতেই এবং এরশাদ পাঁচ আসনের পাঁচটিতেই জয়ী হন। রওশন এরশাদ চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতে হারেন। গঠিত সংসদ পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করে।
অষ্টম : বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এমএ সাঈদের নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অষ্টম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। এ নির্বাচনে আরপিওর নতুন বিধান অনুসারে সশস্ত্র বাহিনী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ভোটার ছিল ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৪১৪ জন এবং নারী ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৪১৪ জন। ভোট দেয় ৫ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন (৭৫.৫৯ শতাংশ) ভোটার। প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৯৩৯ জন। ৫৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি (নাফি) ও ইসলামী ঐক্যজোট এ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেয়। বিএনপি ২৫২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৩ আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয় ৬২টি আসনে। এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৮১ আসনে লড়ে জয়ী হয় ১৪টি আসনে। জামায়াত ৩১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৭টি লাভ করে। ৪৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে জয়ী হন ছয়জন। ইসলামী ঐক্যজোট সাত আসনে লড়ে লাভ করে দুটি আসন। এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) একটি করে আসন লাভ করে। ভোটপ্রাপ্তি ছিল বিএনপি ৪০.৯৭, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩, জামায়াত ৪.২৮, ইসলামী জাতীয় ঐক্যজোট ৭.২৫ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪.০৬ শতাংশ। ৩৮ আসনে ৪৬ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। শেখ হাসিনা পাঁচটি আসনে লড়ে চারটিতে বিজয়ী হন। খালেদা জিয়া পাঁচ আসনে লড়ে পাঁচটিতেই জয়ী হন। রওশন এরশাদ দুই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে জয়ী হন। গঠিত সংসদ পূর্ণ মেয়াদে স্থায়ী হয়।
নবম : এমএ আজিজের কমিশন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ নির্বাচন বর্জন করে। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্বাবধায়ক সরকারের এবং এমএ আজিজের নির্বাচন কমিশনের অবসান ঘটে। দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং সেনা সমর্থনে গঠিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচন কমিশনও পুনর্গঠিত হয় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ৩৮টি দল অংশ নেয়। ভোটার ছিল মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। এর মধ্যে নারী ৪ কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮২০ জন এবং পুরুষ ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৬ জন। প্রথম এ নির্বাচনেই নারী ভোটার বেশি ছিল। প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৫৬৭ জন। আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে ২৬৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৩০, বিএনপি জোট ২৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩০, জাতীয় পার্টি ৪৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৭, জামায়াত ৩৯ আসনে প্রার্থী দিয়ে দুই, জাসদ সাত আসনে প্রার্থী দিয়ে তিন এবং ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচ আসনে প্রার্থী দিয়ে দুটি আসন লাভ করে। এলডিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) একটি করে আসন পায়। ১৫১ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে চারজন জয়ী হন। ভোটপ্রাপ্তি ছিল আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪, বিএনপি ৩২.৫০, জাতীয় পার্টি ৭.০৪ এবং জামায়াত ৪.৭০ শতাংশ। ৫৯ জন নারী প্রার্থী ৬৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া তিনটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয়ী হন। নবম সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়।
দশম : দলীয় সরকারের অধীনে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দশম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটসহ ২৮টি দল নির্বাচন বর্জন অথবা নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। অংশ নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাদের সমমনা দলগুলোসহ ১২টি দল। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ভোটগ্রহণ হয় ১৪৭ আসনে। আওয়ামী লীগের ১২০ জন, জাতীয় পার্টির ৬৬ জন, জাতীয় পার্টি জেপির ২৭ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) ২২ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ২১ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ছয়জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তিনজন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের একজন, গণফ্রন্টের একজন এবং গণতন্ত্রী পার্টির একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১০৪ জন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ৫ জানুয়ারি ১৪৭টি আসনে ওই নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কারণে মোট ৫৯৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মাত্র চারজন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২৩৪, জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ছয়, জাসদ পাঁচ, তরীকত ফেডারেশন দুই, জাতীয় পার্টি জেপি দুটি, বিএনএফ একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসন লাভ করেন। ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন ভোটারের মধ্যে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ১৮৪ জন ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। ভোট দেয় ১ কোটি ৭১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫০ জন।
একাদশ : দলীয় সরকারের অধীনে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এ দিন ভোট হয় গাইবান্ধা-৩ আসন বাদে ২৯৯টি আসনে। সে সময় নিবন্ধিত ৩৯টি দলই নির্বাচনে অংশ নেয়। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কয়েকটি দল নিবন্ধিত দলগুলোর জোটে যোগ দিয়ে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নিবন্ধন বাতিল থাকায় দলটির প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয়। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে প্রদত্ত ভোটের হার ছিল ৮০ শতাংশ। ২১৩টি কেন্দ্রে বিস্ময়করভাবে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনা ঘটে। এ নির্বাচন সম্পর্কে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ২০২০ সালের ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তৈরি প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ওই প্রতিবেদনকে একপেশে ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন। নির্বাচনে আ. লীগ জোট ২৬৬টি, বিএনপি জোট ৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্যরা ৪টি আসন লাভ করে।