প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০২ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিচ্ছেন চঞ্চল চৌধুরী। ছবি : ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে চলচ্চিত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পঁচাত্তরে সপরিবারে তার মৃত্যুর পর দেশে অপসংস্কৃতি চালু হয়।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’চলচ্চিত্র একটি সমাজকে সচেতন করতে পারে, আনন্দ দিতে পারে, সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে পারে। আদর্শ জাতি গঠনে প্রেরণা ও দেশপ্রেমে উৎসাহী করতে পারে। সেই চলচ্চিত্র আমাদের নির্মাণ করতে হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।
এবার চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা খসরু (বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু) ও অভিনেত্রী রোজিনা (রওশন আরা রোজিনা)। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রোজিনা নিজে পুরস্কার গ্রহণ করলেও দেশের বাইরে থাকায় খসরুর পুরস্কার নেন অভিনেতা আলমগীর। এরপর একে একে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় পুরস্কার গ্রহণ করেন শিল্পীরা।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সভাপতির বক্তব্যে দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি বলে দাবি করেন। এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্যসচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
পুরস্কার বিতরণ শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালে নিহত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আজ যারা পুরস্কৃত হলেন সবাইকে অভিনন্দন। চলচ্চিত্র একটি সমাজকে সচেতন করতে পারে, আনন্দ দিতে পারে, সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে পারে, আদর্শ জাতি গঠনে প্রেরণা ও দেশপ্রেমে উৎসাহী করতে পারে। সেই চলচ্চিত্র আমাদের নির্মাণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু এ দেশে চলচ্চিত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। পঁচাত্তরে সপরিবারে তার মৃত্যুর পর দেশে অপসংস্কৃতি চালু হয়। নানা পথ পরিক্রমায় আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে দেশের সংস্কৃতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সিনেমাকে শিল্প ঘোষণা করেছি, আইন পাস করে চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পীদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করেছি। চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন পাস করেছি। আমাদের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ শেষ প্রান্তে। তবু যেখানে থাকি আমরা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে পাশে থাকব।’
এ সময় তিনি ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রের পরিচালক ও কলাকুশলীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সময় পেলে তিনি চলচ্চিত্র উপভোগ করেন বলেও বক্তব্যে জানান।
পুরস্কার প্রদান শেষে শিল্পীদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করেন আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত শিল্পী রোজিনা। অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে প্রথমে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার জন্ম না হলে আমরা এই দেশ পেতাম না। তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই আমি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের রেনু থেকে আপনাদের প্রিয় রোজিনা হয়েছি। আমার এই পথচলায় যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে স্মরণ করছি, গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে তাদের সবার প্রতি এ সম্মাননা উৎসর্গ করছি।’
রোজিনা আরও বলেন, ‘আমাকে এই সম্মাননায় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষে পরিবেশন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি ও তমা মির্জার একক নাচ পরিবেশনা। আরও ছিল সাইমন সাদিক-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূর ও জায়েদ খান-আঁচলের দ্বৈত নাচ। সংগীত পরিবেশন করেন বালাম, কোনাল, সাব্বির ও লিজা। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে নাচের কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন ইভান শাহরিয়ার সোহাগ।
আজীবন সম্মাননাসহ মোট ২৭টি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২, পুরস্কারের সংখ্যা ৩২টি। এবার যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে মুহাম্মদ কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ এবং রায়হান রাফীর ‘পরাণ’। ‘শিমু’র জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পুরস্কার উঠেছে রুবাইয়াত হোসেনের হাতে। ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। জয়া আহসান (দ্য বিউটি সার্কাস) এবং রিকিতা নন্দিনী শিমু (শিমু) যৌথভাবে গ্রহণ করেছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।
‘পরাণ’ সিনেমার জন্য পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিয়েছেন নাসির উদ্দিন খান এবং ‘পাপ পুণ্য (ভাইস অ্যান্ড ভার্চু)’ সিনেমার জন্য সেরা সহঅভিনেত্রীর পুরস্কার নিয়েছেন আফসানা করিম মিমি ওরফে আফসানা মিমি।
শুভাশিস ভৌমিক ‘দেশান্তর’ সিনেমার জন্য নেতিবাচক চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘বিরোত্তো’ সিনেমার জন্য যৌথভাবে সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন বৃষ্টি আক্তার ও মুনতাহা আমেলিয়া। ‘পায়ের ছাপ’ সিনেমার গানের জন্য সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন রিপন খান (মাহমুদুল ইসলাম খান)।
‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার ‘এ মন ভিজে যায়’ গানের জন্য যৌথভাবে বাপ্পা মজুমদার এবং ‘হৃদিতা’ সিনেমায় ‘ঠিকানাবিহীন তোমাকে’ গানের জন্য চন্দন সিনহা যৌথভাবে সেরা গায়কের পুরস্কার পান।
আতিয়া আনিশা ‘পায়ের ছাপ’ সিনেমার ‘এই শহরের পথে’ গানটির জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার গ্রহণ করেন। ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘরে ফেরা’ শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কৃত হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন—রবিউল ইসলাম জীবন (সেরা গীতিকার), শওকত আলী ইমন (সেরা সুরকার), ফরিদুর রেজা সাগর (গল্প), খোরশেদ আলম খসরু (গল্প), মুহাম্মদ কাইয়ুম (চিত্রনাট্যকার), এস এ হক অলিক (সংলাপ), সুজন। মাহমুদ (সম্পাদক), হিমাদ্রি বড়ুয়া (সেরা শিল্প নির্দেশনা), ফারজিনা আক্তার (সেরা শিশুশিল্পী বিভাগে বিশেষ পুরস্কার), রিপন নাথ (সাউন্ড ডিজাইনার), তানসিনা শাওন (কস্টিউম) ও মো খোকন মোল্লা (মেকআপ)।