প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৩ পিএম
মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত অতিথিরা। প্রবা ফটো
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে আবারও সাম্প্রদায়িক হামলা, নির্যাতন ও সহিংসতার শঙ্কার কথা জানিয়েছে সামাজিক সংগঠন সম্প্রীতি বাংলাদেশ। সংগঠনটি বলছে, দেশে নির্বাচন এলেই সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বেড়ে যায়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে হিন্দু সম্প্রদায় ভয়াবহ সময় পার করেছে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ঘটে যাওয়া ‘নির্বাচনী সহিংসতার’ পুনরাবৃত্তি কখনোই কাম্য নয়।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এমন আশঙ্কার কথা জানান।
সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি খুবই আশাবাদী লোক। আমি নিরাশ হতে চাই না। একাত্তর সাল আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি, তাই নিরাশ হই না। কারণ একই সময়ে অনেক কষ্ট ও অনেক আনন্দের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এখন এটা চিন্তা করলে ভাবি, এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা বের হয়ে আসলাম কীভাবে? আমি জানি বাংলাদেশের মানুষকে প্রয়োজন হলে একত্র করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা এক সময় দেখলাম রাজাকাররা এদেশের মন্ত্রী। তখনই কবি, লেখক সাংবাদিক সবাই ঐক্যবদ্ধ হলেন, রাজাকারদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেখলাম একটা রেনেসা হয়েছে। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর এক রাতের ভেতরে বাংলাদেশকে উলটো দিকে নিয়ে যাওয়া হল। আমাদের বর্তমান যত সংকট সব তখন থেকেই শুরু। প্রশ্ন করা শুরু হল মুক্তিযুদ্ধে এতো মানুষ মারা গিয়েছিল কিনা। রাজাকাররা ভোট পেয়ে মন্ত্রী হয়ে গেলে। কাজেই এ সুযোগ আর দেওয়া যাবে না।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, হিন্দু, মুসলিম, সাওতাল সবাই এদেশে সমান মর্যাদায় বসবাস করতে শুরু করল। কিন্তু ৭৫’র পর সবকিছু পাল্টে গেল। বাংলাদেশ আবার পেছনে হাঁটতে শুরু করলো। তাই নতুন প্রজন্মকে একদম প্রাইমামি অবস্থা থেকে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে আমরা মানুষ। তাদের শিক্ষা দিতে হবে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, সাওতাল এসব শুধুই বিভেদ করে। তৃণমূল থেকেই শিশুদের ভাতৃত্বের শিক্ষা দিতে হবে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য স্যোশাল মিডিয়া বিপদজনক জায়গা বলে আখ্যা দেন তিনি।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, নির্বাচন এলেই সাম্প্রদায়িক নানা দাঙ্গা আমরা দেখতে পাই। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত নির্বাচন পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যেসব হামলা-ধর্ষণ হয়েছে, তা ইতিহাসের কালো অধ্যায়। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে আমরা কোনো সাম্প্রদায়িকতা চাই না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আর কোনো সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি তৎপর। তারা দেশে আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায়, আমাদেরকে সেটা রুখে দিতে হবে।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এগুলোকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা যদি একত্রে সবাই মিলে দাঁড়াতে পারি, তাহলে তাদেরকে আমরা রুখতে পারব। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, যতোই ষড়যন্ত্র থাকুক সেগুলো ছিন্ন করে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যেতে হবে। সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে শান্তি-সমৃদ্ধির দিকে আমরা এগিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ২০০১ সালের বাংলাদেশ আর দেখতে চাই না। ইসিকে বলেছি শক্তভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময়ে যে ভয়াবহতা, নৃশংসতা, যে অত্যাচার হয়েছিল, তা প্রায় একাত্তর সালকে মনে করিয়ে দেয়। সে ব্যাপারগুলো আমরা বাংলাদেশ থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে চাই।
অধ্যাপক চন্দন পোদ্দার বলেন, যুব সমাজকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত করতে পারলে বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের সম্প্রীতির বাংলাদেশ। রাজনৈতিক কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে।
আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন সাংবাদিক প্রনব সাহা, আইনজীবী ড. ফারজানা মাহফুজ, সাংবাদিক নুর সাফা জুলহাস, মোস্তফা হোসেন, গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদ হাসান ময়না প্রমুখ।