বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৬ এএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩৯ এএম
নির্বাচন ভবন। ফাইল ছবি
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বক্তব্য ঠিক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার। কারণ নির্বাচন কমিশনাররা বলে আসছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধেই এ তফসিল ঘোষণা হবে। সে ক্ষেত্রে সময় আছে আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এবং আগামীকাল বুধবার (১৫ নভেম্বর)।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম গতকাল সোমবার (১৩ নভেম্বর) সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিশন জানিয়েছে নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে। প্রথমার্ধের দুই দিন যেহেতু এখনও সামনে আছে, তাই আপনারা অপেক্ষা করুন।’
এদিকে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, মঙ্গলবার (আজ) তফসিল ঘোষণা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আগামীকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। ভোটগ্রহণ হতে পারে ৬ অথবা ৭ জানুয়ারি।
আজ মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে গতকাল কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নানা অভিমত পাওয়া গেছে। তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে একাদশ জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির ও নির্বাচিতদের শপথগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার জন্য সময় দিতে চায় কমিশন।
মঙ্গলবারের মধ্যে এ কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ২৪টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী নির্মিত ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কমিশনাররা মনে করছেন, এ দুটি বড় অনুষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা যথাযথ হবে না।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ সিইসির কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। বেলা ১১টার দিকে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে মিলিত হতে পারেন।
নিবন্ধন পাচ্ছে আরও ২৯ পর্যবেক্ষক সংস্থা
এদিকে দ্বিতীয় ধাপে বহুল আলোচিত সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনসহ আরও ২৯টি দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কোনো দাবি-আপত্তি না এলে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ সংস্থাগুলোকে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন দেবে কমিশন। এসব সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি থাকলে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ইসি সচিবের কাছে সে ব্যাপারে আবেদন করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৬৭টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইসির নিবন্ধন পেয়েছে। তবে এই সংখ্যা কম হয়ে যাওয়ায় পুনরায় আবেদন চেয়ে দ্বিতীয়বার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি।
প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনকে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।
নতুন ২৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থা হলো- ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুওর (ডরপ), প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি ফর রুরাল বেসিক নীড (স্রাবন), সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম, রুরাল ভিশন (আরভি), তরফসরতাজ শান্তি সংঘ (টিএসএস), পিপলস অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট (পাশা), পাথওয়ে, এমপাওয়ারমেন্ট থ্রস্ট ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ), জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, নাইস ফাউন্ডেশন, নারী উন্নয়ন সংস্থা, সুফিয়া হানিফ ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিউনিটি অর্গানাইজেশন (সাকো), সবার তরে আমরা ফাউন্ডেশন (এসটিএএফ), বিয়ান মনি সোসাইটি, অগ্রগতি সেবা সংস্থা (অসেস), আল-কুরআন প্রচার সংস্থা (আকপস) বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল আসফ লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশন, এআরডি (অ্যাসোসিয়েশন ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট), বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (বামাসপ), রাজারহাট স্বাবলম্বী সংস্থা, সংগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, উদ্ভাবনী মহিলা সংস্থা, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর দি নীডি (ভন), দিনাজপুর পল্লী উন্নয়ন প্রচেষ্টা (ডিপিইউপি), সেলফ ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ (এসডিআই) ও বেডো আর্থ সামাজিক কেন্দ্র।
দুই উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ তিন কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে অন্য কেন্দ্রগুলোর ফলাফল অনুসারে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে অনিয়মে জড়িত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, ১৯৯১’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, লক্ষ্মীপুরে অনিয়মে সম্পৃক্ত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরের তিন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, ১৯৯১’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দুই আসনের উপনির্বাচনে গত ৫ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হয়। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে একটি কেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে সিল মারার ভিডিও প্রকাশ হলে এর তদন্ত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনেও একটি কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। এরপর কমিশন ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত করে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান, লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছিল-যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যার ভিত্তিতে কমিশন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত করিয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনও কমিশন পেয়েছে।
তিনি জানান, লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ খাগরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি ভোটকক্ষের জাল ভোটের কিছু ছবি গণমাধ্যমে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই একটি কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম দেখা গেছে। ইসির ওই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে জাল ভোটের জন্য দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আরপিও সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওই দুই বুথের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কর্মকর্তা বিশেষ আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে দুটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কেন্দ্র দুটি হচ্ছে যাত্রাপুর নূরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও শরিপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।