× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন

ওয়াশিংটনকে ‘স্পষ্ট’ বার্তা নয়া দিল্লির

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৭ এএম

আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৮ পিএম

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতির কৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন এলেই সরব হয়ে ওঠে পশ্চিমাবিশ্ব। তার চেয়েও বেশি থাকে প্রতিবেশী ভারতের আগ্রহ। যে কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বেশ কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পররাষ্ট্র-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের ‘টু প্লাস টু’ যে সংলাপ হয়েছে, সেখানেও উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এবারের যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠকের বিশেষত্ব হচ্ছে, আগে বাংলাদেশ নিয়ে কী আলোচনা হতো, সেটা নিয়ে কোনো পক্ষই কথা বলত না। এবার বলেছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের কিছু বিষয় নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষই বাংলাদেশের বিষয়ে স্পষ্টভাবে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে এই বৈঠকটি করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয় নিশ্চিত করলেও কী আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলেননি। আবার দুই দেশের দেওয়া যৌথ বিবৃতিতেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল নিয়েও কথা হয়েছে। 

বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বিষয়ে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি।’ 

সেই দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? – এমন প্রশ্নে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবে। তারাই তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

এ প্রসঙ্গে বিনয় কোয়াত্রা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আমরা তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই। স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জাতি গড়ার যে রূপকল্প তারা ঠিক করেছে, সেক্ষেত্রে ভারত সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমরা খুব স্পষ্ট ছিলাম।’

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কেমন ছিল, সে ব্যাপারে কোনো আভাস বিনয় কোয়াত্রা দেননি। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য করার সুযোগ আমাদের নেই।’

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সবসময়ই সরব হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তৎপরতা বাড়ছে তাদের‌। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা ঢাকা সফর করেছেন দেশটির কূটনীতিকরা। সম্প্রতি ঘুরে গেছে দুই কংগ্রেস সদস্যসহ একটি প্রতিনিধিদল। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধিদলও ঢাকা সফর করে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ‘যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে’ তারা দেশটির ভিসা পাবেন না এমন সিদ্ধান্ত রয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আন্দোলন জোরালো করেছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় রয়েছে। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত, সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে জনমনে। অক্টোবরে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ কয়েকটি দেশ। বিভিন্ন মহল থেকে দুই দলের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও কেউই তাতে সাড়া দেয়নি। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মাত্রা বেশ গভীর। তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে আস্থার যে ঘাটতি ছিল, সেগুলো নিরসনে বর্তমান সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বে ভারতের রাজ্যগুলোতে একসময় উলফার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ ছাড়া ভারতের চাওয়া হলো বাংলাদেশে এমন একটি সরকার আসুক, যাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের অবস্থায় না নিয়ে যায়। সেটা নিয়েও বর্তমান সরকার কাজ করেছে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভারত স্পষ্ট করে বলেছে বাংলাদেশের নির্বাচন এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমেরিকা যেভাবে উৎসাহী, সেভাবে ভারত একেবারেই নাÑ সেটাই তো স্পষ্ট করল। ভারত স্বাভাবিকভাবে চাইবে না বাংলাদেশে এমন একটা সরকার আসুক, যারা তার নিরাপত্তায় হুমকি হতে পারে। যেহেতু বর্তমান সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইনসারজেন্সি ছিল, সেটি বর্তমান বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্সে নিয়ে এসেছে। ভারত কেন জেনে শুনে বিপদ ডেকে আনবে? এটা আমেরিকার না বোঝার কোনো কারণ নেই, ওটাই ভারত স্পষ্ট করেছে। 

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বড় আকারে বসে পড়ুক, সেটাও ভারত চাইবে না। কারণ তাদের অভিজ্ঞতা। পাকিস্তানের সাথে যেহেতু একটা তিক্ত সম্পর্ক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় সম্পর্ক আছে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় সম্পর্ক হোক, বিশেষ করে নিরাপত্তার ব্যাপারে, সেটা ভারত কখনোই চাইবে নাÑ অর্থাৎ বাংলাদেশকে আরেকটা পাকিস্তান বানাতে চাইবে না। সে জায়গায় আমার মনে হয় না যে, তাদের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তারা এটাই বলাবলি করেছে।

ড. ইমতিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কী করতে চায়, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু এ নির্বাচনের বিষয়ে ভারত তার সাথে থাকবে, এটা আশা করা ঠিক না। যারা আশা করেছিল, তারা কেন করেছিল আমি জানি না। তাদের কাছে মোরাল কথা হলো, নর্থ-ইস্টের ইনসারজেন্সি একটা বিশাল ব্যাপার। এ সরকার বড় আকারে পরিবর্তন আনতে পেরেছে এটা অস্বীকার করলে চলবে না। স্বাভাবিকভাবেই এমন কোনো সরকার বাংলাদেশে তারা চাইবে না, যেটাতে ভারত মনে করবে নিরাপত্তার হুমকি হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তারা মনে করে বাংলাদেশের সরকার যে সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার দিয়েছে, সেটার প্রতি তারা তাকিয়ে থাকবে। কোন দল এলো বা না এলো সে ব্যাপারে চিন্তিত থাকবে আপাতত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা