৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪১ পিএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০০:০০ এএম
দুর্বত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ছে বাস। প্রবা ফটো
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনে রবিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানী ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের ওপর ককটেল হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। প্রথম দফার অবরোধের চেয়ে এবার সারা দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও বেড়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি আগুনের খবর জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ অদিধপ্তর। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনা যানবাহনে আগুন দেওয়ার। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় যানবাহন ভাঙচুরও করা হয়েছে।
আজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও রাজধানীতে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে তালা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ বেশিরভাগ এলাকায় গতকাল অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। প্রথম দফার অবরোধের তুলনায় গতকাল রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক বেশি। তবে বেশিরভাগ জেলা থেকে গতকালও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা হলেও সেগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য। অনেক স্কুল অনলাইন ক্লাস করেছে। কিছু স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিল।
১৫ যানবাহনে আগুন
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন নজরুল জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ১৩টি বাস ও একটি ট্রাক এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, অবরোধ শুরুর আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিউমার্কেটের গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক নামে একটি বাসে, ৭টা ৩৫ মিনিটে এলিফ্যান্ড রোডে গ্রিন ইউনিভার্সিটির বাসে, রাত ৮টায় সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে রাইদা পরিবহনের বাসে, রাত ১০টায় গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সামনে মনজিল পরিবহনের বাসে, রাত পৌনে ১২টায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অনাবিল পরিবহনের বাসে, একই সময়ে ভোলার চরফ্যাশনের নতুন বাসস্ট্যান্ডে যমুনা এক্সপ্রেস নামে বাসে আগুন দেওয়া হয়।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ির সদরে জিরোমাইলে মিনি ট্রাকে, বিকাল ৪টায় রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালি রুটের একটি বাসে, একই সময়ে মাতুয়াইলে সাদ্দাম মার্কেটের সামনে একটি ও শ্যামপুরে জুরাইন বালুর মাঠে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে, বিকাল সোয়া ৫টার দিকে মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে একটি বাসে, সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুরের ভোগরায় বাসে, সাড়ে ৬টার দিকে বাংলামোটরে একটি বাসে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায় শিকড় পরিবহনের একটি বাসে, রাত ৮টার দিকে খুলনায় রূপসা-মোংলা মহাসড়কের তালিমপুরে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এ ছাড়া গতকাল বেলা ৩টায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাদলপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে, বিকাল পৌনে ৪টায় ঠাকুরগাঁওয়ের তিন রাস্তার মোড়ে পরিত্যক্ত টায়ারে আগুন দেওয়া হয়।
হুট করে বাসে আগুন দেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পত্তিতে কারা আগুন লাগাচ্ছে তা আমরা জানি। অনেকের নাম আমরা পেয়ে গেছি। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। রবিবার তার নিজ কার্যালয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, অবরোধে কারা এসব আগুন লাগাচ্ছে আমরা জানি। তাদের নাম আমরা পেয়েছি, ছবি পেয়েছি। আমরা অবশ্যই তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
ককটেল হামলায় পুলিশ আহত
গতকাল সকালে উত্তরায় হাউজ বিল্ডিং এলাকায় পুলিশের ওপর ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেনÑ এসআই মাহবুব আলী, একজন কনস্টেবল ও একজন আনসার সদস্য। এ ঘটনায় ককটেলসহ এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মাসুদ আলম জানান, হাউজ বিল্ডিং এলাকায় মমতাজ মহলের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল বাবুর নেতৃত্বে একটি মিছিল থেকে পুলিশকে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি জিএম হাসানকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি আরও জানান, এ সময় জিএম হাসানের কাছ থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের কালিরহাট মোড় এলাকায় পুলিশকে নিক্ষেপ করে ককটেল ছুড়েছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ।
সতর্ক পাহারায় পুলিশ বিজিবি
অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করেছে ১৯ হাজার পুলিশ সদস্য। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল। স্ট্যান্ডবাই ছিল আরও ১০ প্লাটুন বিজিবি। এ ছাড়া বিজিবি সদস্যরা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে টহল দিয়েছে। সারা দেশে টহল দিয়েছে র্যাবের ৩০০টির বেশি টহল টিম। রেললাইন, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন ও সড়কপথ রক্ষায় ৬৫ হাজার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) সদস্য মোতায়েন ছিল। তারা দেশের রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, লঞ্চ ঘাট, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় নিরাত্তার দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া রাজধানীতে থানা পুলিশ, ব্যারাকের সদস্য ও এপিবিএন সদস্যদের সমন্বয় করে নিরাপত্তার ছক তৈরি করা হয়েছে। দিনের বেলায় ১০ হাজার ও রাতে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
দূরপাল্লার বাসে যাত্রী নেই
অবরোধের প্রথম দিনে সুনসান নীরব ছিল সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা। যাত্রীসংকটে টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। দুয়েকটি বাস ছাড়লেও সেগুলোতে যাত্রী ছিল না। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। সড়কে যানবাহন কম থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং
রাজধানীর বনশ্রী, কুর্মিটোলাসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধর সমর্থনে পিকেটিং করেছে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। বিএনপির কর্মীরা রাজধানীর বনশ্রীতে মিছিল বের করে। কুর্মিটোলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে পিকেটিং ও বিক্ষোভ করে। ফকিরাপুলে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবক দল। জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিরপুর, মিরপুরের পূরবী বাসস্ট্যান্ড, মগবাজার রেল ক্রসিং, কাফরুল, ভাটারাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ ছাড়া এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করেছে।
রাজধানীর বাইরে বগুড়া, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর চারঘাট, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।