প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৬ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৫১ পিএম
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে। প্রবা ফটো
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককল্যাণ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রেপ্তার করার মতো এই মুহূর্তে কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুদক আইনে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা আছে – মামলার আসামিরা যদি সাক্ষী-প্রমাণ বা আলামত নষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, যদি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অথবা সাক্ষী-প্রমাণ প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি যে তিনটি শঙ্কার কথা বললাম তার (ইউনূসের) ক্ষেত্রে তেমন কিছু উদ্ভব হয়নি।’
দুদকের কেন মনে হলো তিনি পালাবেন না বা আলামত নষ্ট করবেন না – এমন প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘গ্রেপ্তার করতে হলে যে শঙ্কার কথা বললাম, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সব তথ্য আছে। তার (তদন্তকারী কর্মকর্তা) মনে হয়েছে (ইউনূসের) ক্ষেত্রে তেমন কিছু উদ্ভব হয়নি।’
দুদকের তলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটের দিকে সংস্থাটির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
দুদক সূত্র জানায়, এ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান দুদক কার্যালয়ে আসেন। সকাল ১০টা থেকে ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়।
জিজ্ঞাসবাদ শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অপরাধ করিনি, তাই শঙ্কিত নই। আমাকে ডাকা হয়েছিল, তাই এসেছিলাম। যেহেতু এটা আইনগত বিষয়, তাই বিস্তারিত আমার আইনজীবী বলবেন।’
ইউনূসের ভাষ্যমতে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে দুদক কি তাকে হয়রানি করছে– সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আইনগতভাবে তাকে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা তাদের পাওনা টাকা পেতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর অভিযোগে সত্যতা পাওয়ার পর এটি দুদকের কাছে পাঠায়। দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়।’
কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে পাওয়া অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বোর্ডের সদস্যরা অসৎ উদ্দেশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ রাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাৎ করেন।
ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘বক্তব্য রেকর্ড করার বিষয়টি হলো, যখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার অবস্থানটি তিনি যেন পরিষ্কার করতে পারেন। সেজন্যই তাকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি যেন ন্যায় বিচার পান, সেজন্যই উনাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিজের মতো করে বলার সুযোগ পান। উনাদের মতো করে বলেন। তদন্ত কর্মকর্তা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবেন। প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা জামিনে আছেন কি না – জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন আদালতে গিয়ে জামিন পেয়েছেন। অন্যরা জামিনে আছেন কি না, এই মুহূর্তে হালনাগাদ তথ্যটি আমার কাছে নেই।’
প্রাথমিকভাবে যে অনিয়মের সত্যতার কথা বলা হচ্ছে সেটির সত্যতা কতটুকু – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যখন দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা হয়, মামলা হওয়ার পর একজন তদন্ত কর্মকর্তা কার্যবিধি সম্পন্ন করেন। তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে এটি আমাদের কোনোভাবেই জানার সুযোগ নেই।’
অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, দুদকের তফসিলভুক্ত অভিযোগ হওয়ার পরও আপনারা কেন কাজ করছেন না – প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘মানিলন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে, আমরা কিন্ত কোথাও বাধা দিইনি। কোথায় কীভাবে অর্থ পাচার হয়েছে, সেসব তদন্তে আসবে। আমরা কাউকে বাধ দিইনি।’
ইউনূসকে নিয়ে দুদক চাপে আছে কি না– জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং বিধি অনুসারে কাজ করে। এখানে ব্যক্তি পরিচয় দেখার সুযোগ নেই।’
ইউনূসের আইনজীবীর বক্তব্য অনুসারে এটি শ্রম আদালতের ফৌজদারি অংশ, তাহলে দুদক কি কারও ইশারায় কাজ করছে – জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে, এটি আমাদের তফসিলভুক্ত। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই বিষয়ে বাড়তি কমেন্ট করার সুযোগ নেই।’